Friday, 16 August 2013

কেল্লা বাবার মাজার সমাচার ১ম পর্ব


লিখেছেনঃ -নাছিম- (তারিখঃ বৃহঃ, ১২/০৭/২০১২ - ১৬:০৬)


ধর্ম ব্যবসার প্রকার ভেদ সংখ্যায় প্রধানতম কয়েকটি’র একটি মাজার ব্যবসা। পোষাক পরিচ্ছেদে দলে থেকে দলের ভিন্নতা থাকলেও লক্ষ্য অভিন্ন থাকে। সেটা হ্ল ছলে বলে কৌশলে বিত্তশালী হয়ে ঊঠা। এই চতুর ব্যাপারি বর্গ অনেকটাই পর্দার আড়াল থেকে সু-কৌশলে কলকাঠি নাড়েন এই বিষয় টূকু অনেকেই জানেন। যেমন করে, নির্ধারিত জায়গাকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়িক ভিত্তি গড়ে তুলেন। প্রথমে নিজেদের চেলা চামুন্ডা দিয়ে শুরু করলেই সমাজের সুবিদা বঞ্চিত একটি জনগুষ্টি এক প্রকার বিনা দাওয়াতে হাজির হন এক থালা খিচুড়ীর আশায়। হিজড়া সম্প্রদায়- শাররিক বিকলাঙ্গ ও মানসিক প্রতিবন্ধী, নেশাগ্রস্ত, ভুমিহীন, ভবঘুরে শ্রেনী, অনেকেই নীরহ প্রকৃতির যার ধর্মজ্ঞান শূণ্যের ঘরে, কেউ আবার টূকাই সম্প্রদায়ের। তবে লক্ষ্য প্রতিষ্টার শুরু তাদের ঘাড়ে ভর দিয়েই। ধীরে ধীরে ডালপালা- আজব গুজব দিয়ে বিস্তৃতি লাভ করে। তাদেরই একটি মাজার আজকের পোষ্টের মূল প্রতিপাদ্য। 
ব্রাক্ষনবাড়ীয়া জেলার আখাউড়া থানার খড়মপুরে অবস্থিত হজরত সৈয়দ আহম্মদ (রঃ) এর দরগাহ যা কেল্লা শহীদের দরগাহ নামে সমগ্র দেশে পরিচিত। কেল্লা শহীদের দরগাহ সম্পর্কে যে কাহিনী প্রচলিত আছে তা হচ্ছে এই যে, সে সময় খড়ম পুরের জেলেরা তিতাস নদীতে মাছ ধরত। একদিন চৈতন দাস ও তার সঙ্গীরা উক্ত নদীতে মাছ ধরার সময় হঠাৎ তাদের জালে একটি খন্ডিত শির আটকা পড়ে যায়। তখন জেলেরা ভয়ে ভীত হয়ে পড়ে এবং খন্ডিত শিরটি উঠাতে গেলে আল্লাহর কুদরতে খন্ডিত শির বলতে থাকে ‘একজন আস্তিকের সাথে আর একজন নাস্তিকের কখনো মিল হতে পারে না। তোমরা যে পর্যন্ত কলেমা পাঠ করে মুসলমান না হবে ততক্ষণ আমার মস্তক স্পর্শ করবে না।’ খন্ডিত মস্তকের এ কথা শুনে মস্তকের কাছ থেকে কলেমা পাঠ করে চৈতন দাস ও সঙ্গীরা হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে মুসলমান হয়ে যায়। মস্তকের নির্দেশ মোতাবেক ইসলামী মতে খড়মপুর (তিতাস পাড়ে) কবরস্থানে মস্তক দাফন করে। ধর্মান্তরিত জেলেদের নাম হয় শাহবলা, শাহলো, শাহজাদা, শাহগোরা ও শাহরওশন। তাঁরাই এ দরগাহের আদিম বংশধর। এই দরগাহের খ্যাতি ধীরে ধীরে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ থেকেই শাহ পীর সৈয়দ আহম্মদ গেছুদারাজ ওরফে কেল্লা শহীদের পবিত্র মাজার শরীফ নামে পরিচিতি লাভ করে। ২৬০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত দরগা শরীফের জায়গা তৎকালীন আগরতলা রাজ্যের মহারাজা দান করেন। বিভিন্ন ঐতিহাসিকগণ অনুমান করেন যে, আওলিয়া হজরত শাহ জালাল (রঃ) এক সঙ্গে সিলেটে যে ৩৬০ জন শিষ্য এসেছিলেন হজরত সৈয়দ আহম্মদ গেছুদারাজ ছিলেন তাঁদের অন্যতম। তরফ রাজ্যেও রাজা আচক নারায়নের সঙ্গে হজরত শাহজালালের প্রধান সেনাপতি হজরত সৈয়দ নাসিরউদ্দিন যে যুদ্ধ পরিচালনা করেন সে যুদ্ধে হজরত সৈয়দ আহম্মদ গেছুদারাজ শহীদ হন এবং তাঁর মস্তক তিতাস নদীর স্রোতে ভেসে আসে। লোক মুখে কথিত ছাড়া সঠিক ইতিহাসে কোন খোজ ঠিকানা নেই। তবে এই কথাও প্রচলিত আছে যে, নিম্মবর্ন হিন্দু জেলে সম্প্রদায় একই জেলার নবীনগর থেকে শক্তিশালী ব্রাক্ষন দ্বারা বিতারিত হয়ে তিতাস পাড়ে বসতি গড়ে ছিলেন। মৎস আহোরনের ক্ষুদ্র আয়ে খেয়ে পড়ে বেচে থাকার নিদারুন কষ্ট থেকে পরিত্রান পেতেই এই চার মালু ফন্দি আটকান এবং শুরুতে হিন্দু হিসাবেই খাদেম থাকলেও ধীরে ধীরে মুসলমানের প্রভাব বাড়তে থাকায় ব্যবসায়িক কতৃত্ব বজায় রাখতে মুসলমান নাম ধারন করেন যদিও তাদের ধর্মান্তরিতের কোন তত্ব প্রমান কারো আছেই নেই। এখন প্রতি বছর কেল্লা শহীদের মাজারে বাংলা ভাদ্র মাসের ২৬-৩০ তারিখ বাৎসরিক ওরসে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। হয় কোটি কোটি টাকা আর অসংখ্য ছোট বড় প্রাণী ও উপহার সমাহার। এর ছোট্র একটি অংশ ডাল খিচুড়িতে ব্যয় হয় আর বাকী খাদেম গোষ্টির পকেটে এমনকি খাদেমের ছেলে মেয়ে সবাই এর অংশ পায় শ্রেনীবিভাগে । উপরে উল্লেখিত চার বংশের লোকজন ব্যাতিত অন্য কেহ মাজার পরিচালনা কিংবা খাদেম নিয়োজিত হতে পারে না। পরিচালনা ও অন্যান্য শাখার ক্ষমতার দন্ডে অনেক হত্যাকান্ড গঠিত হয়েছে কিন্তু চতুর খাদেম গোষ্টি নিজেদের মধ্যেই বিবাদ মিটিয়ে হত্যাকে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দিয়েছে। ক্ষমতা দখলে নির্বাচন প্রথা চালুর পর এক ভয়াবহ রুপ ধারন করে। পয়সা দিয়ে ভোট কেনা, ব্লাক্মমেইল করে ভোট আদায় ইত্যাদি ইত্যাদি। নিজ আয়ত্বের বাহিরে কিছু ঘটলে তখন কিন্তু আর গোপন থাকেনা এমনি তাদের একটি অংশ,

তাজা খবরঃ ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আমিনুল হক খাদেমকে মালিবাগ এলাকায় অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা গুলি করে পালিয়ে যায়।

পরদিন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের খবরঃ-
ঢাকার মালিবাগে রোববার বিকেলে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত ব্যক্তি হলেন আখাউড়া শাহপীর কল্লা শহীদ মাজার শরীফের সাধারন সম্পাদক আমিনুল হক খাদেম আনিস (৫০)
 এখানে 


বিস্তারিত প্রতিবেদন : ঢাকা বিভাগীয় অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আনিস খাদেম হত্যার নেপথ্য উন্মোচিত হয়েছে। পেশাদার ৫ খুনিকে আটক করেছে র্যািব। এরা হচ্ছে- সাইদুর রহমান মিনু খাদেম (৫৮), খুনি শেখ শামিম আহমেদ (২৮), কিলার বিপ্লব (৩৫), মাহবুব আলম লিটন (২৫) ও পিচ্চি সোহেল (২৫)। র্যা বের গোয়েন্দা ইউনিটের সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে রাজধানী ও তার বাইরে অভিযান চালিয়ে এদের আটক করে। আটকৃতদের মুখ থেকেই বেরিয়ে এসেছে প্রশাসনিক কর্মকর্তা খুনের নেপথ্য। মাজার পরিচালনার দন্দ্বে মিনু খাদেমের করা দেড় কোটি টাকার চুক্তিতে এই হত্যাকান্ড সংগঠিত হয় ।

কে এই মিনু খাদেম? গুলশানে ফ্ল্যাট ও জমি বিক্রি প্রতারণা চক্রের অন্যতম হোতা এই মিনু খাদেম। ১৯৮২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকির ল্যাক্সিংটন কলেজ থেকে বিবিএ পড়াশুনা শেষ করে সে ন্যাশনাল ব্যাংক কুমিল্লা শাখায় যোগদান করে। ঐ ব্যাংক থেকে সে এক বছরে ১৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে। এ অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এরপর থেকে নিজ গ্রামে কল্ল্যাশাহ মাজারে খাদেম নিযুক্ত হয়। ১৯৯৬ সালে সে মাজার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়। কল্ল্যাশাহ মাজারে প্রতিদিন প্রায় ২ লাখ টাকা অনুদান উঠত। এ টাকার বেশিরভাগই মাজার কমিটির সদস্যরা লুটপাট করত। ২০০২ সালে মাজার কমিটির নির্বাচনে মিনু খাদেম হেরে যায়। এরপর মাজার থেকে প্রায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে মিনু খাদেমের বিরুদ্ধে। মিনু খাদেম গুলশানে ফ্ল্যাট বিক্রির ব্যবসা শুরু করে। গুলশানে সে তার দুইটি ফ্ল্যাট একাধিক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেছে। এই ফ্ল্যাট বিক্রির ঘটনায় ৬৫ লাখ টাকার চেক জালিয়াতির অভিযোগ তার বিরুদ্ধে ওঠে। এছাড়া সে গুলশানে চিলি দূতাবাসের সামনে একটি দোতলা বাড়ি দখল করে নিতে আবুল খায়ের খাদেম নামে আরেক ব্যক্তিকে হোন্ডা বাবুর মাধ্যমে খুন করার পরিকল্পনা নিয়েছিল। 

পোষ্ট ছোট রাখার স্বার্থে সম্পুর্ন পোষ্টকে দুই ভাগে দেয়ার মনস্থির করেছি। ২য় পর্বে থাকবে,
মাজার কেন্দ্রিক বিভিন্ন অপরাধ, অসামাজিক কার্যকলাপ, প্রকাশ্যে শিরিক, মুর্খ্যতার মাত্রা ও খাদেম সম্প্রদায়ের বিস্তারিত।

No comments:

Post a Comment