প্রশাসক নিয়োগসহ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান রেখে 'মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কার্যক্রম (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩'-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আইনটি জনগুরুত্বসম্পন্ন ও জরুরি বিধায় একই সঙ্গে এটি অধ্যাদেশ আকারে জারিরও অনুমোদন দেয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের জানান, দেশে বিদ্যমান এমএলএম কোম্পানিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং এদের প্রতারণার হাত থেকে জনগণকে রক্ষার জন্য এ আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে। এমএলএম কোম্পানিগুলো ইলেকট্রনিক ও গৃহস্থালি পণ্যের ব্যবসা করতে পারবে। যেমন ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস, প্রসাধন সামগ্রী, টেলিকমিউনিকেশন সামগ্রী ও কৃষিজাত পণ্যসহ ৬ ধরনের পণ্য এর আওতায় আসবে। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত আইনে বিদ্যমান এমএলএম কোম্পানিগুলোকে বন্ধ করা হবে না, তবে তাদেরকে অধ্যাদেশ জারির ৯০ দিনের মধ্যে লাইসেন্স নিতে হবে। লাইসেন্স ছাড়া কেউ এ ব্যবসা করতে পারবে না এবং অনুমতি ছাড়া লাইসেন্স হস্তান্তর করা যাবে না। লাইসেন্সের মেয়াদ ১ বছর হবে এবং পরে কোম্পানিগুলো চাইলে নবায়ন করতে পারবে। তবে আইনের শর্ত ভঙ্গ করলে সরকার কোম্পানির লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে। লাইসেন্স নবায়ন না করলে কোম্পানি বন্ধ করে দেয়া হবে। এছাড়া কোম্পানি আইনে কোম্পানি গঠন করতে হবে এমএলএম কোম্পানিগুলোকে। এমএলএম কোম্পানিগুলো যেসব পণ্য কেনাবেচা করতে পারবে সেগুলো হচ্ছে_ গৃহস্থালি, ইলেকট্রনিক, প্রসাধনী, হারবাল, টেলিযোগাযোগ, ট্রয়লেট্রিজ, সেবা, প্রশিক্ষণ ও কৃষিজাত পণ্য ইত্যাদি।
প্রস্তাবিত আইনে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সাজার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে সচিব বলেন, লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করলে ৫ থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদ-। অনুমতি ছাড়া লাইসেন্স হস্তান্তর করলে ১ থেকে ২ বছর কারাদ- এবং ৫ লাখ টাকা জরিমানা, বিদ্যমান এমএলএম কোম্পানিগুলো লাইসেন্স না নিলে ৬ থেকে ১০ বছরের জেল এবং ৫০ লাখ টাকা জরিমানা। প্যাকেজিংয়ের বিধান লঙ্ঘন করলে ১ থেকে ২ বছরের জেল এবং ২ লাখ টাকা জরিমানা। মোড়কে লিখিত মূল্যের অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রয় করলে ১ থেকে ৩ বছরের জেল এবং ৫ লাখ টাকা জরিমানা। অযৌক্তিক মূল্য আদায় করলে ১ থেকে ৩ বছরের জেল এবং ৩ লাখ টাকা জরিমানা, নিম্নমানের পণ্যের জন্য ২ থেকে ৫ বছরের জেল এবং ৫ লাখ টাকা জরিমানা, ক্রেতার অনুমতি না নিয়ে তার বাড়িতে যাওয়া কিংবা জোরপূর্বক পণ্য বিক্রি করলে ৬ মাস থেকে ১ বছরের জেল এবং ১ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া টার্গেটকৃত ভোক্তা বা ক্রেতার অনুমতি ছাড়া কোনো এমএলএম কোম্পানির প্রতিনিধি যদি তার বাড়িতে গিয়ে পণ্য বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে বসে থাকে তবে তার জন্যও শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদ- এবং এ আইনে উল্লেখ নেই এমন কোনো কার্যক্রম যদি অপরাধ বলে গণ্য হয় তবে সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে।
সচিব জানান, আইন অমান্যকারীদের বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করা যাবে এবং দ্বিতীয়বার আইন অমান্য করলে দ্বিগুণ শাস্তি হবে। ধাপে ধাপে শাস্তির পরিমাণও বাড়বে।
প্রশাসক নিয়োগ প্রসঙ্গে সচিব বলেন, কোম্পানি সরকারের কাছে অপরাধী বলে গণ্য হলে সরকার তার বোর্ড রহিত করে এক বা একাধিক প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে।
সরকার যদি মনে করে, কোনো কোম্পানি আইন লঙ্ঘন করে সর্বসাধারণকে প্রতারিত করছে এবং জনস্বার্থে এ কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ করা দরকার তাহলে সরকার লিখিতভাবে কারণ দেখিয়ে গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সংশ্লিষ্ট এমএলএম কোম্পানির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব তথা এক বা একাধিক প্রশাসক নিয়োগ এবং পরিচালনা পর্ষদ গঠন করতে পারবে। প্রশাসক নিয়োগের চারটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- সরকার যদি মনে করে প্রতারণার উদ্দেশ্যে কোনো কোম্পানি পরিচালিত হচ্ছে, কোম্পানির ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা প্রতারণা করলে, শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ সংরক্ষণ এবং জনস্বার্থে কোনো কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন মনে করলে।
সচিব জানান, এছাড়া মন্ত্রিসভায় 'ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং আইন ২০১৩'-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন, 'তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০১৩'-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন এবং 'সার্ক এগ্রিমেন্ট অন ট্রেড ইন সার্ভিসেস'-এর আওতায় বাংলাদেশের 'শিডিউল অব স্পেসিফিক কমিটমেন্টস'-এর অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
No comments:
Post a Comment