Saturday, 23 May 2015

খলিফা উমর (রা) এর অসাধারণ একটি ঘটনা

মোমের আলোয় কাজ করছিলেন খলিফা উমর রাযিআল্লাহু আনহু । এমন সময় সেখানে আসলেন তার দুই আত্মীয় । খলিফা তাড়াতাড়ি ফুঁ দিয়ে মোমবাতিটি নিভিয়ে দিলেন । অন্য আরেকটি মোমবাতি ধরিয়ে অতিথিদের বসতে দিয়ে তাদের খোজখবর নিলেন ।

 

কৌতুহল চাপতে না পেরে একজন জানতে চাইলেন, আমাদের দেখে কেন আপনি আগের মোমবাতি নেভালেন আর নতুন একটি জ্বালালেন ? খলিফা জবাব দিলেন : আগের মোমবাতি ছিল রাষ্ট্রের সম্পত্তি থেকে কেনা । তোমরা যেহেতু আমার আত্মীয়, তাই তোমাদের সাথে আমার ব্যক্তিগত অনেক আলাপ হবে । আমার নিজের কাজে জনগণের আমানত থেকে আমি কিছু খরচ করতে পারি না। তাহলে আল্লাহর দরবারে আমাকে জবাবদিহি করতে হবে । তাই নিজের টাকায় কেনা মোমবাতিটি তোমাদের দেখে জ্বালালাম ।

 

এই জবাবে আত্মীয়রা হতভম্ব হলেন । তারা এসেছিলেন আত্মীয়তার খাতিরে বিশেষ কোন সুবিধা পাওয়া যায় কি না, সেই অনুরোধ করতে । কিন্তু সামান্য মোমবাতি নিয়ে খলিফার এত বিবেচনা ও সতর্কতা দেখে নিজেদের প্রস্তাব জানাতে তারা আর সাহসই করলেন না।

 

আরেকবার খলিফার কাছে এক লোক অবৈধ সুবিধা চায় । খলিফার সামনে রাখা কিছু কাঠে তখন আগুন জ্বলছিল। খলিফা বললেন , ঠিক আছে । তুমি এই আগুনের ভিতর তোমার হাত কিছু সময়ের জন্য রাখো ; তারপর তোমার অনুরোধ আমি বিবেচনা করবো । লোকটি ভয় পেয়ে বললো , হে খলিফা ; এই আগুনে হাত ঢুকালে আমার হাত তো জ্বলে যাবে । খলিফা বললেন , তুমি দুনিয়ার এই সামান্য আগুনকে ভয় পাচ্ছ অথচ আমাকে তুমি দোযখের অনন্ত আগুনের ভিতরে নিয়ে যেতে চাও? তদবিরকারী নিজের ভুল বুঝতে পেরে ফিরে যায়।

Thursday, 23 April 2015

সেই রুবানাই এখন মেয়র প্রার্থী আনিসুল হকের দ্বিতীয় স্ত্রী রুবানা হক




বেশ কয়েক দশক আগের কথা। 'যদি কিছু মনে না করেন' নামে বেশ জনপ্রিয় একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান চলত বাংলাদেশ টেলিভিশনে।

মানুষ যখন স্বৈরাচারী বিরোধী আন্দোলন করছে, এরশাদের পুলিশের গুলিতে আন্দোলনের সঙ্গী ভাইয়েরা যখন রাস্তা-ঘাটে জীবন দিচ্ছে তখন এই 'যদি কিছু মনে না করেন' অনুষ্ঠানে ফজলে লোহানির সাথে একটা রূপসী মেয়ে এরশাদের পক্ষে আর আন্দোলনের বিপক্ষে অর্ধ সত্য তথ্যের সাথে মিথ্যা মিশিয়ে জনমত তৈরি করার চেষ্টা চালিয়ে গেছে দিনের পর দিন।

টিয়ার গ্যাসের ধোঁয়ায় চোখ লাল করে বাসায় ফিরে রাত্রে মানুষ দেখেছে কিভাবে আন্দোলনকারীদের নিয়ে হাসি ঠাট্টা করা হতো সেই অনুষ্ঠানে। যাদের বয়স কম, তাঁরা হয়তো দেখেননি। অথবা যাদের বয়স কম তাদের হয়ত মনে নেই। তবে যে সময়ের আমরা যারা কিছউটা হলেও বুঝতে শিখেছি, আমাদের স্মৃতি থেকে তো এই কথা মুছে যাবার কথা না।

'যদি কিছু মনে না করেন' অনুষ্ঠানের ফজলে লোহানির পাশের সেই মেয়েটার নাম রুবানা, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনিসুল হকের বর্তমান (দ্বিতীয় স্ত্রী-মতান্তরে তৃতিয়) স্ত্রী রুবানা হক।

এরশাদের পতনের পর এই রুবানা ছিলেন এরশাদের দালাল হিসেবে চিহ্নিত বেশ কয়েকজন অতি পরিচিত মউকের মধ্যে একজন এবং এরকম চিহ্নিত দালালদের মধ্যে সম্ভবত তরুনতম।

আর কি বিচিত্র এই দেশ, সেই রুবানা হক আজকে এই মুহূর্তে একাত্তর টেলিভিশনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর প্রতিনিধি হিসেবে এসে নারী নির্যাতন সংক্রান্ত টক শোতে এসে বেশ আলোচনা করছেন। মেরে দেওয়া কম্পানি মোহাম্মাদি গ্রুপের কর্ণধার হিসাবে টিভি'র আলোচনা অনুষ্ঠানে সবক দিচ্ছেন।

আবার আশ্চর্যের বিষয় পতিত স্বৈরাচার এরশাদের অতি ঘনিষ্ট এই মহিলাই এখন আনিসুল হকের ইলেকশন ম্যানিফেস্টো তুলে ধরছেন। তাঁর সাথে আছেন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের সভাপতিও। আর তাদের পাশে সাথে কপাল কুঁচকানো বিরক্ত মুখ নিয়ে সুলতানা কামালও বসে আছেন।

যারা পরিবর্তনের জন্য লড়ছেন, মনে রাখবেন বদলাতে হবে অনেক কিছু, দখল করতে হবে অনেক কিছু, ভাঙতে হবে অনেক কিছু, ছুড়ে ফেলতে হবে অনেক কিছু। চূড়ান্ত লড়াইয়ে হয়ত আজকের গতানুগতিক ধারার সব তথাকথিত রাজনৈতিক দলই আমাদের বিপক্ষের ক্যাম্পেই থাকবে।

লেখক: তপ্ত সীসা
(ব্লগ থেকে সংগৃহিত)

Thursday, 9 April 2015

কেমন আছেন মালয়েশিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকেরা

জগতে সুখের অনুসন্ধান করে না এমন লোকের সংখ্যা নগণ্য। ক্ষণিকের এই জীবনে একটু প্রশান্তি পাওয়ার আশায় মানুষ কি না করছে? আর্থিক সচ্ছলতার জন্য ছুটছে গ্রাম থেকে শহরে, এক শহর থেকে অন্য শহরে, কখনো বা দেশের সীমানা পেরিয়ে ভিন দেশে। সেই সুখের অভিপ্রায়ে মানুষ ছুটে চলে অজানার টানে। পরিবারের সবার মুখে এক চিলতে হাসি এনে দেওয়ার জন্য যাদের থাকে আপ্রাণ চেষ্টা। জীবন বাস্তবতায় সাধারণত প্রত্যাশিত বস্তুটাই রয়ে যায় অধরায়। সাধ্যের মাঝে সবটুকু সুখকে সঙ্গী করে জীবনের পথচলা, এ যেন এক অন্তিম যাত্রা!

মাঝেমধ্যে একলা চিত্তে ভাবি, আমরা বোধ করি দিনকে দিন এতটাই বস্তুবাদী হয়ে যাচ্ছি যে অর্থবিত্ত ছাড়া আর কিছুই চোখের সামনে দেখতে পাই না। শয়নে স্বপনে শুধুই কাল্পনিক ধনী হতে চাই এবং সেটা বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য দিশেহারা হয়ে যাই। অতঃপর শত কষ্টের কথা চিন্তা করেও পাড়ি জমাই বিদেশে। যাঁরা দেশে আছেন, তাঁরা অনেকেই হয়তো জানেনই না যে কত কষ্টে আছেন তাঁর বাবা, ভাই অথবা আত্মীয়রা। 

মালয়েশিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশির মধ্যে শিক্ষার্থী, বিনিয়োগকারীরা ভালো থাকলেও ভালো নেই বেশির ভাগ শ্রমিক। তাঁদের অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এই দুরবস্থার মূল কারণ হলো অশিক্ষা, অদক্ষতা, দূতাবাসের অবহেলা আর আদম ব্যবসায়ীদের প্রতারণা। বর্তমানে কর্মরত শ্রমিকদের অনেকেরই আবার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু ভিসা নবায়ন হচ্ছে না। অনেকের আবার ওয়ার্ক পারমিট নেই। আগে যেখানে কাজ করতেন, সেখানেও ওয়ার্ক পারমিটের অভাবে কাজ করতে পারছেন না। বাঙালি মালিকদের অধীনে কেউ কেউ চাকরি করছেন পার্টটাইমার হিসেবে, তাও চুরি করে। পুলিশের ভয়ে তাঁদের সারাক্ষণ অস্থির থাকতে হয়। রাতেও ঘুমাতে পারেন না। তাঁদের সমস্যা সমাধানের জন্য মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আগে দূতাবাসে কথা বলতে গেলে তাঁরা কর্ণপাত করতেন। এখন তাঁরা নাকি এসব আর আমলে নিচ্ছেন না। শ্রমিকদের কথা না হয় বাদই দিলাম, আমি নিজে ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ হাইকমিশনের দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছি। আমার মতো যাঁরা উচ্চশিক্ষার জন্য মালেয়শিয়ায় আছেন, তাঁদের অনেকেই বাংলাদেশ হাইকমিশনের দায়িত্বরত ব্যক্তিদের কাছ থেকে হয়রানি ও দুর্ব্যবহারের শিকার হয়েছেন। কেমন জানি সবাইকে দেখেই তাঁরা নাক সিটকান। আসলে লালফিতার দৌরাত্ম্যের কারণে ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে। আবেগের বশবর্তী হয়ে নয়, সত্যি কথা বলতে কি, তাঁদের অপ্রত্যাশিত আচরণ প্রমাণ করে যে, তাঁরা মানুষকে মানুষ ভাবেন না। মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সঙ্গে আলাপে জানা যায় নানা কষ্টের কথা। 

একটা ঘটনা বলি। বিকেলে হাঁটার জন্য গত দুই দিন আগে ক্যাম্পাস থেকে বাইরে গিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল পরীক্ষার সময়ে নিজেকে পড়াশোনার চাপ থেকে হালকা করা। মাঝেমধ্যে এরকম করে আমরা কয়েকজন (জহির, সাকিব ভাই, হাদী ভাই, শামিম, জামান ভাই ও আমি) মিলে অজানার উদ্দেশে ক্যাম্পাস থেকে বের হই। সাধারণত বাংলাদেশের গ্রামের স্বাদ পেতে এখানকার গ্রামে (কাম্পুং বলা হয় মালে ভাষায়) যাওয়া হয়। সেদিন গিয়েছিলাম একটু অন্যভাবে, ক্যাম্পাসের একদিকে কাঁটাতার ছেঁড়া ছিল বলে সেদিক দিয়ে বের হয়ে রওনা দিলাম। ওদিকটায় নতুন করে রাস্তা বানানো হচ্ছিল। তারুণ্যময় উদ্দীপনায় আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম এর শেষ কোথায় আজ দেখেই ছাড়ব। অ্যাডভেঞ্চার বলে কথা! গল্পে গল্পে অনেক দূরে চলে গিয়েছিলাম আঁকাবাঁকা পথ ধরে। যেন বাংলাদেশের টানেই হেঁটে যাচ্ছি অজানায় আমরা কয়েকজন যুবক। 
চলতে চলতে রাস্তার খানিক দূরের কিছু একটায় আমাদের চোখ আটকে গেল। একটা জীর্ণ কাঠের নির্মিত ঘর লক্ষ করলাম। কৌতূহল নিয়ে সেদিক পানেই ছুটলাম সবাই। আবিষ্করণ দৃষ্টি দিয়ে ঘরটি অতিক্রম করছিলাম। হঠাৎ সেখান থেকে একজন আমাদের ডাক দিল ‘ও বাঁইয়েরা (ভাইয়েরা) এট্টু (একটু) ইঁয়ানে (এখানে) আঁইয়েন, কতা (কথা) কইতাম ছাই (চাই)।’ আমরা চমকিত হলাম। এখানে বাংলা ভাষায় কে ডাক দিল? দেশের মানুষ দেখলেই এক অন্য রকম আনন্দ লাগে, কারও সঙ্গে বাংলায় কথা বলতেও ভালো লাগে। কাছে গিয়ে বাক্যালাপ করতেই মনটা বিষাদে ভরে গেল! এখানে বলে রাখা ভালো, বিদেশে সাধারণত অল্প কথায় মানুষ তার মনের কষ্টগুলো অকপটে বলে দেয়। কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলাম, তিনি ১৭ বছর ধরে এই মালয়েশিয়ায় আছেন। দুই বছর আগে তাঁর পারমিট শেষ হয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও আর ভিসার মেয়াদ বাড়াতে পারেননি। উপায়ান্তর না পেয়ে অবশেষে ‘অবৈধ আদম’ হিসেবেই রয়ে গেছেন, আত্মগোপন করে কাজ করে যাচ্ছেন। শহর এলাকায় কাজ করলে পুলিশের কাছে ধরা খাওয়ার ভয় থাকে, তাই গ্রামাঞ্চলের জঙ্গলে থেকে কোনোমতে তিনি পেট চালানোর জন্য একটা প্রকল্পের আওতায় কাজ করছেন নামমাত্র বেতনে। বেতনের কথা বলতে গেলে একটি বিষয় বলা দরকার, যাঁদের ওয়ার্ক পারমিট নেই অথবা যাঁরা মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসায় থেকে কাজ করে যাচ্ছেন, মালিকেরা সব সময় তাঁদের অসহায়ত্বের এই সুযোগ নিতে চান। কখনো কখনো কোনো কারণ ছাড়াই শ্রমিকদের বেতন আটকিয়ে রাখেন নতুবা বিনে পয়সার কাছাকাছি বেতনে করিয়ে নিতে চান পাহাড়সম কাজ। সবকিছুই যেন তাঁদের মর্জি, যা ইচ্ছে তাই, এক্কেবারে যাচ্ছেতাই! যা-ই হোক, কথা বলে জানতে পারলাম তাঁর নাম আসলাম মিয়া। তিনি দুই মাস কোনো বেতন পাননি। কারণ প্রজেক্টের কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে। আলাপচারিতার মাঝখানে চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিলাম। চারদিকে পাহাড় আর জঙ্গলে এঁটে আছে। এই অভয়ারণ্যে কেউ নেই। যেন নেই কোনো বন্য পশু-পাখিও, যার সঙ্গে কথা বলা যায়। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত এভাবেই কাটিয়ে দিচ্ছেন। মানব সভ্যতা থেকে দূরে এই গহিন জঙ্গলে বসবাস করেও তিনি রেহাই পাননি পুলিশ-মামার হাত থেকে। গত মাসে এই জঙ্গল থেকেই ধরা খেয়েছেন, ছাড়া পেতে সাড়ে সাত শ রিংগিত (প্রায় ১৮ হাজার টাকা) গুনতে হয়েছে! 
আসলাম মিয়ার গল্পই যেন অধিকাংশ প্রবাসীর জীবন ছবি। একবার কিছু মানুষের সঙ্গে দেখার সুযোগ হয়। যাঁরা জঙ্গলে থাকেন লুকিয়ে। আমার কাছে মনে হয়, যাঁরা জঙ্গলে থাকেন, তাঁরাই সম্ভবত রয়েছেন সবচেয়ে বিপদের মধ্যে। মালয়েশিয়ার বেশির ভাগ এলাকা পাহাড়বেষ্টিত। এই পাহাড়ি জঙ্গলে রয়েছে বিষাক্ত সাপ। বাংলাদেশি শ্রমিকদের যাঁদের কাজ জোটে পাম বাগানে (মালয়েশিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে পাম চাষ হয়, এটা তাদের অন্যতম কৃষিজ সম্পদ), তাঁদের অনেকেই নিরাপত্তাবঞ্চিত হয়ে সাপ ও বন্য বিষাক্ত পোকার ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন। কিছুদিন আগে একটি সংবাদ শুনেছিলাম যে কোনো এক বাংলাদেশি শ্রমিক নাকি জঙ্গলে কাজ করতে গিয়ে সাপের দংশিত হয়েছিলেন। মালিকের কাছে সেই খবরটিও নাকি সময়মতো পৌঁছায়নি। মারা যাওয়ার তিন দিন পর তাঁর গলিত লাশ নাকি উদ্ধার করা হয়েছিল। আহারে, অভাগাদের বেশির ভাগ লাশ হয়তো এমনি করে জঙ্গলে পচে-গলে পড়ে থাকে!
অন্যদিকে যাঁরা একটু ভালো অবস্থায় আছেন, তাঁরাও যে খুব বেশি ভালো আছেন, তা নয়। বেশির ভাগ মালয়েশিয়াপ্রবাসী শ্রমিক আছেন নানা ঝামেলায়। সারা দিন হাড়ভাঙা খাটুনি অতঃপর বাসায় ফিরে রান্না করে খাওয়া, এ যেন কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা। শ্রমিকদের অনেকের কাছে বাসা বলতে হয়তো ১০ ফুট বাই ১০ ফুটের স্যাঁতস্যাঁতে রুমে সাত-আটজনের একত্রে বসবাস, সেখানেই তাঁদের খাওয়া-দাওয়া এবং ঘাপটি মেরে পড়ে থেকে কোনোমতে রাত পার করা। আবার অনেকে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের পরিত্যক্ত টিন সংগ্রহ করে জোড়াতালি লাগিয়ে সেটার বেড়ি দিয়ে কোনো রকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই বের করে নেন। যাতে করে অন্তত রাতটা কাটানো যায়। আহা জীবন! ভাগ্যদোষে অতিষ্ঠ হয়ে শ্রমিকেরা সবকিছু ছেড়ে যে দেশে ফিরে যাবেন, তার কি উপায় আছে? বাংলাদেশি শ্রমিকেরা জনপ্রতি প্রায় আড়াই থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করে মালয়েশিয়াতে এসেছেন। এমন অনেকেই আছেন, যাঁদের টাকা উপার্জনের পরিমাণ এখনো অপ্রতুল এবং জমাকৃত অর্থের পরিমাণ শূন্যের কোঠায়।
যাঁদের জীবনের গল্প বলছি, সেই সব প্রবাসী মেহনতি মানুষের ঘাম ঝরানো উপার্জিত অর্থ তাঁরা পাঠান তাঁদের পরিবারকে একটু শান্তি দেওয়ার জন্য। তথাপি, এই আত্মত্যাগ করে জীবন চালানোর মর্ম হয়তো তার পরিবার কোনোদিন জানবে না। হয়তো দেশের মানুষ কখনোই এসব প্রবাসী মানুষের আর্তনাদ শুনবে না, হাহাকার বুঝতে পারবে না। আমার দেখামতে বেশির ভাগ লোকই দেশে গিয়ে তাঁর উপার্জিত অর্থ ভোগ করতে পারেন না। দেশে ফিরে তাঁকে আবার সেই আগের পেশাতেই ফিরতে হয়। আমার সঙ্গে অভাগা কারও দেখা হলে, আমার পরামর্শ চাইলে, আমি তাঁদের দেশে চলে যেতে বলি। যাঁদের কাছে প্রবাস মানে মানবেতর জীবন, কী দরকার আছে তাঁদের কসাইখানার টেবিল হয়ে বিদেশে পড়ে থাকার? তার চেয়ে আপনজনের সান্নিধ্যে থেকে এক বেলা একটু কম খেয়ে বেঁচে থাকাতেও অনেক শান্তি!
এমন হাজারো গল্প আমাদের অনেকেরই হয়তো জানা। তবে পরবাসী হয়ে এই প্রবাস জীবনে এত দিনে যা অনুধাবন করলাম সেটা হলো—অনেকের কাছে বিদেশ মানে সোনার হরিণ, আবার অনেকের কাছে হয়তো বা একটা মোহ, স্বপ্ন পূরণের প্ল্যাটফর্ম। হ্যাঁ, সবই হয়তো ঠিক আছে কিন্তু অজানা ভীনদেশে পা বাড়ানোর আগে কয়েকটা ব্যাপার ভেবে নেওয়া প্রয়োজন। যাঁরা দেশ থেকে বিদেশে আসতে চাইছেন, তাঁদের হুট করে আবেগের বশবর্তী হয়ে বিদেশ আসা উচিত নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দালালেরা গ্রামের অশিক্ষিত সাদাসিধে মানুষদের লোভের ফাঁদে ফেলে তাঁদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে বিদেশে পাচার করে দেয়। সেই সব সহজ-সরল মানুষকে নানা ধরনের মিথ্যে প্রলোভন দেখিয়ে এবং ব্যক্তিগত সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিদেশে আনার পর সেই দালালের চেহারা পাল্টে যায়, আর কোনো খোঁজ মেলে না তাঁর। মূলত তিন মাসের ভিজিটর ভিসায় তাঁদের আনা হয়। স্বভাবতই, ভিজিটর ভিসায় আসা তথাকথিত শ্রমিকদের কোনো কাজের সন্ধানও হয় না। সুতরাং প্রারম্ভিক ঝামেলা এড়ানোর জন্য নবাগত শ্রমিকদের আত্মগোপনের পথ বেছে নিতে হয় এবং সাধের মালয়েশিয়ায় এসে তাঁদের ঠাঁই মেলে জঙ্গলে। এভাবেই আসলাম মিয়াদের একসময় স্থায়ী ঠিকানা হয় বিস্তীর্ণ ও গহিন জঙ্গলে। এখানে একাকী থাকতে থাকতে একটা সময় তাঁরা পরিপূর্ণ জংলি হয়ে ওঠেন! 
যাঁদের কায়িক শ্রমের অর্থে আমাদের দেশের বৈদেশিক মুদ্রা বৃদ্ধি পায়, সেসব জনশক্তি আজ রয়েছেন এমন অবহেলিত। অথচ আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। যে জনশক্তি নিয়ে আমাদের দেশের মানুষ নিকট অতীতে গর্ব করত, আজ তাঁদের এই দুঃসময়ে সরকারের নতজানু নীতি আমাদের মান-সম্মান আর সাহসকে ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে। একতা, সহযোগিতা, প্রতিবাদ, প্রতিরোধ এবং এর বাস্তবায়নের জন্য সরকার সক্রিয় উদ্যোগ নিলে এসব সমস্যা অনেকাংশে কমতে পারে বলে অনেকেই মনে করে থাকেন। এর মাধ্যমে বেঁচে যেতে পারে আমাদের হাজার হাজার ভাইয়ের জীবন, তাঁদের পরিবার এবং লক্ষ মানুষের অসহায় আর্তনাদ!

Tuesday, 17 March 2015

আয়াতুল কুরসী পড়ার ফযীলত

১) উবাই ইবনে কা’ব (রাঃ) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘হে আবূ মুনযির! তুমি কি জান,মহান আল্লাহর গ্রন্থ (আল-কুরাআন) এর ভিতর তমার যা মুখস্থ আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় (মর্যাদাপূর্ণ) আয়াত কোনটি?’ আমি বললাম, ‘সেটা হচ্ছে আয়াতুল কুরসী।’ সুতরাং তিনি আমার বুকে চাপড় মেরে বললেন, ‘আবুল মুনযির! তোমার জ্ঞান তোমাকে ধন্য করুক’। (মুসলিম ৮১০)

(অর্থাৎ তুমি, নিজ জ্ঞানের বর্কতে উক্ত আয়াতটির সন্ধান পেয়েছ, সে জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।)

২) আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বললেন (একবার) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে রমযানের জাকাত(ফিৎরার মাল-ধন) দেখাশোনা করার দায়িত্ব দেন। বস্তুতঃ ( আমি পাহারা দিচ্ছিলাম ইত্যবসরে) একজন আগমনকারী এসে আজঁলা ভরে খাদ্যবস্তু নিতে লাগল। আমি তাকে ধরলাম এবং বললাম, ‘তোকে অবশ্যই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) –এর কাছে পেশ করব।’ সে আবেদন করল,আমি একজন সত্যিকারের অভাবী। পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব আমার উপর, আমার দারুন অভাব।’ কাজেই আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।

সকালে (রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট হাযির হলাম) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, ‘হে আবূ হুরাইরা! গত রাতে তোমার বন্দী কী আচারন করেছে’? আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! সে তার অভাব ও (অসহায়) পরিবার-সন্তানের অভিযোগ জানাল। সুতরাং তার প্রতি আমার দয়া হলে আমি তাকে ছেরে দিলাম ।’ তিনি বললেন, ‘ সতর্ক থেকো, সে আবার আসবে’।

আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর আনুরুপ উক্তি শুনে সুনিশ্চিত হলাম যে, সে আবার আসবে। কাজেই আমি তার প্রতীক্ষায় থাকলাম। সে (পুর্ববৎ) এসে আজঁলা ভরে খাদ্যবস্তু নিতে লাগল। আমি বললাম, ‘অবশ্যই তোকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) –এর কাছে পেশ করব ।’ সে বলল, ‘আমি অভাবী,পরিবারের  দায়ত্ব আমার উপর, (আমাকে ছেড়ে দাও) আমি আর আসব না ।’সুতরাং আমার মনে দয়া হল। আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।

সকালে উঠে (যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে গেলাম তখন) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বললেন, ‘‘আবূ হুরাইরা! গত রাতে তোমার বন্দী কী আচারন করেছে’? আমি বললাম, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ)! সে তার অভাব ও অসহায় সন্তানের-পরিবারের অভিযোগ জানাল। সুতরাং আমার মনে দয়া হলে আমি তাকে ছেরে দিলাম’। তিনি বললেন, ‘ সতর্ক থেকো, সে আবার আসবে’।

সুতরাং তৃতীয়বার তার প্রতীক্ষায় রইলাম। সে (এসে)আজঁলা ভরে খাদ্যবস্তু নিতে লাগল। আমি তাকে ধরে বললাম ‘‘এবারে তোকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) –এর দরবারে হাযির করবই।’ এটা তিনবারের মধ্যে শেষবার । ‘ফিরে আসবো না’ বলে তুই আবার ফিরে এসেছিস ।’’ সে বলল ‘তুমি আমাকে ছেড়ে দাও, আমি তোমাকে এমন কতকগুলি শব্দ শিখিয়ে দেব, যার দ্বারা আল্লাহ তোমার উপকার করবেন ।’ আমি বললাম ‘সেগুলি কী?’ সে বলল, ‘যখন তুমি (ঘুমাবার জন্য) বিছানাই যাবে, তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ ক’রে (ঘুমাবে) তাহলে তোমার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রক্ষক নিযুক্ত হবে। আর সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে শয়তান আসতে পারবে না’।

সুতরাং আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। আবার সকালে (রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে গেলাম) তিনি আমাকে বললেন, ‘‘তোমার বন্দী কী আচারন করেছে?’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! সে বলল, ‘‘ আমি তোমাকে এমন কতিপয় শব্দ শিখিয়ে দেব, যার দ্বারা আল্লাহ আমার কল্যাণ করবেন ।’’ বিধায় আমি তাকে ছেড়ে দিলাম  তিনি বললেন ‘‘সে শব্দগুলি কী?’’ আমি বললাম, ‘সে আমাকে বলল, ‘‘যখন তুমি বিছানাই (শোয়ার জন্য) যাবে, তখন আয়াতুল কুরসী শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ‘আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম’ পড়ে নেবে ।’’সে আমাকে আর বলল, “তার কারনে আল্লাহর তরফ থেকে সর্বদা তোমার জন্য একজন রক্ষক নিযুক্ত থাকবে। আর সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে শয়তান আসতে পারবে না’’।

(এ কথা শুনে) তিনি (সাঃ) বললেন, ‘‘শোনো ! সে নিজে ভীষণ মিথ্যাবাদী; কিন্তু তোমাকে সত্য কথা বলেছে। হে আবূ হুরাইরা! তুমি জান, তিন রাত ধরে তুমি কার সাথে কথা বলছিলে?’’ আমি বললাম, ‘জী না ।’ তিনি বললেন, ‘‘সে ছিল শয়তান’’। (সহীহুল বুখারী ২৩১১)


[] আয়াতুল কুরসী পাঠের ফযীলত []

আয়াতুল কুরসী ( আরবি ভাষায়: آية الكرسي ) হচ্ছে পবিত্র কোরআন শরীফের দ্বিতীয় সুরা আল বাকারার ২৫৫তম আয়াতটি। এটি কোরআন শরীফের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ আয়াত। এতে সমগ্র মহাবিশ্বের উপর আল্লাহর জোরালো ক্ষমতার কথা বর্ণনা করে।

আয়াতুল কুরসী :
আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বইয়্যুমু লা তা খুজুহু সিনাত্যু ওয়ালা নাউম। লাহু মা ফিছছামা ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্। মান যাল্লাযী ইয়াস ফায়ু ইন দাহু ইল্লা বি ইজনিহি ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খল ফাহুম ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম্ মিন ইল্ মিহি ইল্লা বিমা সাআ ওয়াসিয়া কুরসিইউ হুস ছামা ওয়াতি ওয়াল আরদ্ ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল আলিয়্যূল আজীম।

বাংলা অনুবাদ :
আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান। [২:২৫৫][১]


আবূ উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল বলেছেন: “যে ব্যক্তি প্রতি ফরয নামায শেষে আয়াতুল কুরসী পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া কোন কিছু বাধা হবে না। (সহীহ আল্ জামে :৬৪৬৪) হজরত আলী (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ সালাতের পর আয়াতুল কুরসি নিয়মিত পড়ে, তার জান্নাত প্রবেশে কেবল মৃত্যুই অন্তরায় হয়ে আছে। যে ব্যক্তি এ আয়াতটি বিছানায় শয়নের সময় পড়বে আল্লাহ তার ঘরে, প্রতিবেশীর ঘরে এবং আশপাশের সব ঘরে শান্তি বজায় রাখবেন। (সুনানে বাইহাকী )

যে ব্যক্তি উক্ত আয়াত রাতে পাঠ করবে আল্লাহর পক্ষ থেকে তার সাথে একজন রক্ষণা বেক্ষণকারী ফেরেশতা নিযুক্ত থাকবেন এবং সকাল র্পযন্ত শয়তান তার কাছে আসতে পারেনা কারণ, শয়তান ওয়াদা করেছে যে, যে ব্যাক্তি আয়াতুল কুরছি পড়বে আমি তার কাছে যাব না।

শুক্রবার আছরের নামাযের পর নির্জন স্থানে বসে এই আয়াত ৭ বার পাঠ করলে মনে এক আশ্চর্যভাবের উদয় হয় এ ঔ সময় পাঠকারীর দোয়া কবুল হয়।

হযরত আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত :রাসুল (সা.) বলেছেন:সুরা বাকারায় একটি শ্রেষ্ঠ আয়াত রয়েছে, যে ঘরে আয়াতুল কুরসী পাঠ করা হবে সেখান থেকে শয়তান পালাতে থাকে। (মুসতাদরাকে হাকিম:২১০৩)