Saturday, 29 June 2013

সিঙ্গাপুরের চেয়ে ধনী আর চীনের চেয়েও উন্নয়ন করার সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশেরঃ ড. মোহাম্মাদ ইউনুস

নিউজ ডেস্কঃ  বাংলাদেশের সামনে অপার সম্ভাবনা।সিঙ্গাপুরের চেয়ে ধনী দেশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের। শুধু তাই নয়, চীনের চেয়েও উন্নয়ন করতে পারে বাংলাদেশ। আর এর কারণ হলো বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান। রাজধানীতে ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি মিলনায়তনে সোশ্যাল বিজনেস ইয়ুথ কনভেনশন-২০১৩ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের এ অপার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তিনি বলেন, আশেপাশের দেশগুলোকে তাদের যোগাযোগ রক্ষা করতে হলে বাংলাদেশকে মাধ্যম হিসেবে নিতে হবে। তাছাড়া কোনো বিকল্প নাই।

বঙ্গোপসাগর বাংলাদেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে গুরত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বে অব বেঙ্গল রয়েছে কিন্তু চীনের নেই। চীন উন্নতি করেছে, (বঙ্গোপসাগরের কারণে) বাংলাদেশ তার চাইতে উন্নীতি করতে পারে। দারিদ্য বিমোচনে তরুণদের ভূমিকা প্রসঙ্গে বলেন, অর্থ কোনো ব্যাপার না, ব্যাপার হচ্ছে সিস্টেম।

দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, যদি সিস্টেম ঠিক থাকে, আমাদের পরিকল্পনা ঠিক থাকে তাহলে যেকেউ বিনিয়োগ করবে। বিনিয়োগকারী পেতে নিজের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

দেশের শাসন ও অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে তরুণদের নেতৃত্বে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। দেশের তরুণদের প্রযুক্তিগত সৃষ্টিশীলতার প্রশংসা করেন তিনি। একে বড় শক্তি হিসেবে উল্লেখ করেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা। অনুষ্ঠানে ডোফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক লুৎফর রহমানসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

Thursday, 27 June 2013

বাজারজাতকরণে দরকারী পাঁচ ধাপ | প্রিয় ফিনান্স

প্রতিষ্ঠানের দূর্বলতা খুঁজে বের করা এবং সেই অনুপাতে পণ্যের মার্কেটিং করাই প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য থাকে। ব্যবসা পরিকল্পনার মধ্যে বাজারজাতকরণ একটি বড় অংশ। দিন দিন পণ্যের মানে যেমন পরিবর্তন আসছে তেমনি গ্রাহকের মধ্যেও ভিন্নতা আসছ। সঠিক মার্কেটিং সকল গ্রাহকের কাছে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করে। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের একটি নিজস্ব মার্কেটিং পলিসি থাকে। যাকে আমরা স্মার্ট মার্কেটিংও বলতে পারি। স্মার্ট মার্কেটিং একটি প্রতিষ্ঠানের সাফল্য নিশ্চিত করে। ডাইরেক্ট মার্কেটিং, এডভাটাইসিং, টেলিমার্কেটিং, অনলাইন মার্কেটিং, শেয়ার মার্কেটিং, ব্রান্ডিং এরকম আরো অনেক বিষয় নিয়ে মার্কেটিং সম্পূর্ণ হয়।

মার্কেটিংয়ের বিষয়গুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে তবেই কিন্তু একটি কার্যকরী মার্কেটিং প্লান হাতে নেওয়া যায়। এই পর্যবেক্ষণের কয়েকটি ধাপ রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে:-

অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ:
প্রতি প্রতিষ্ঠানেরই তার মৌলিক এবং নিজস্ব মার্কেটিং পলিসি থাকে। প্রথমত প্রাতিষ্ঠানিক এবং ব্যবসায়িক দক্ষতা ও দূর্বলতার দিকগুলো খুঁজে বের করে একটা তালিকা তৈরি করো। পর্যায়ক্রমে সেই তালিকা থেকে দূর্বলতার বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে একটি সম্পূর্ণ কার্যকর মার্কেটিং পলিসি দাড় করানো যেতে পারে। এতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হয় বলে মার্কেটিং পলিসি নিখুঁত হয়।

বাহ্যিক বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ:
গ্রাহকের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়। কার্যক্ষেত্র বা মার্কেটপ্লেসের পরিবেশ অনুধাবন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গ্রাহক কোন পণ্যে আকৃষ্ট, কি সেবা পেতে চায় তার উপর মার্কেটিং নির্ভর করে। গ্রাহক সেবা,টার্গেট মার্কেট, মার্কেটিং স্টাফ, মার্কেটিং মাধ্যম নির্ধারণ করে আর একটি বড় তালিকা তৈরি করে সেই অনুপাতে মার্কেটিং পলিসি ব্যবহার করতে হবে।

পরিসংখ্যান পর্যালোচনা:
বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ দুই তালিকার বিষয়গুলোর সমন্বয় দরকার হতে পারে। এই অসুবিধাগুলো নির্ধারণ করে একটি নতুন তালিকা তৈরি করা যেতে পারে। এতে একটি সময়সীমা নির্ধারণ সহজ হবে।

বাজারজাতকরণ পূণর্বিবেচনা:
বাজারজাতরকর প্রয়োগ করায় কার্যক্ষেত্রে বাজারে তার কি ধরণের প্রভাব পড়ল তা জানা জরুরী। আয় ব্যয় পরিসংখ্যান, অর্জিত সাফল্য ব্যর্থতা, গ্রাহক এবং মার্কেটিং স্টাফদের সমসাময়িক অবস্থা সবকিছুর নিখুঁত পর্যালোচনা করে একটি গঠনমূলক মার্কেটিং পরিকল্পনা চুড়ান্ত করে আবার কাজে নেমে পড়তে হবে।

প্রয়োজনে বাজারজাতকরণ নীতি পরিবর্তন:
অনেক সময় অনেক পরিকল্পনা কজে নাও লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো পরিবর্তন করা দরকার। অনেকসময় মাঝ পথে এসেও থামিয়ো দিতে হবে আপনার কার্যক্রম। মনে রাখবেন আপনি গ্রাহক নিয়ে ব্যবসা করছেন। মার্কেটিং নীতি সর্বদা তাদের দিকে নজর দিয়ে বানাতে হবে।

ব্যবসা বৈধ বা হালাল হওয়ার জন্য ইসলাম নিম্নলিখিত ৭টি শর্তের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে। সেগুলো হলো-


১। ক্রেতা ও বিক্রেতার উভয়ের সুস্থ মস্তিস্ক সম্পন্ন হওয়া 
২। ক্রেতা ও বিক্রেতা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া 
৩। বিক্রিত পণ্য যেন হালাল হয় 
৪। পন্যের মালিকানা হস্তান্তরযোগ্য হওয়া 
৫। বিক্রিত পণ্যের উপর বিক্রেতার পূর্ণ মালিকানা থাকা 
৬। বিক্রিত পণ্যের উপর অন্যের হক বা অধিকার না থাকা 
৭। পণ্য গ্রহণে সন্তুষ্টি বজায় থাকার জন্য ক্রেতার প্রতি বিক্রেতার পণ্য বর্ণনায় স্বচ্ছতা থাকতে হবে এবং ক্রেতা স্বচ্ছ ও বর্ণনা মতে সঠিক পণ্যটি যাতে পেতে পারেন। 

এই ৭টি শর্তই Enloving পূরণ করে। আর তাই Enloving এর ব্যবসা ১০০ ভাগ হালাল।

Enloving প্রোডাক্ট বিক্রি কি খুবই কঠিন?

দেখুন, মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো খাদ্য ও স্বাস্থ্য।
১। কোম্পানির প্রধান পণ্য বায়ো এনার্জেটিক ব্রেসলেট- মূলত বেশ কিছু রোগ প্রতিরোধে কাজ করে। কিছু রোগ ভালোও করে। সারা বিশ্বের মানুষের মতো ইলিংকস-ও বিশ্বাস করে- রোগ হওয়ার পর চিকিৎসার কথা না ভেবে, রোগ যাতে না হয়, তার ব্যবস্থা নেওয়ায় উত্তম। তাই বায়ো এনার্জেটিক ব্রেসলেটের প্রধান কাজ যেহেতু রোগ প্রতিরোধমূলক, তাই এটি সুস্থ্য, অসুস্থ্য সব ধরণের মানুষের জন্যই একটি প্রয়োজনীয় পণ্য। অর্থাৎ যে কোন মানুষের কাছেই আপনি এই পণ্যটি বিক্রি করতে পারেন। 
২। বায়ো টেকনোলজির বায়ো এনার্জেটিক আরও নানা ধরণের পণ্য ইলিংকস খুব শিগগির বাজারে নিয়ে আসবে। ইতিমধ্যেই হেড অফিসগুলো সেসব পণ্যগুলোর ডিসপ্লে শুরু হয়ে গেছে। ফলে প্রত্যেকটি মানুষের কাছেই এসব পণ্যের যে কোন একটি আপনি বিক্রি করতে পারবেন। 
৩। বায়ো এনার্জেটিক পণ্য ব্যবহারের কারণে পৃথিবীর যে কোন অঞ্চলের চেয়ে চীন, জাপান, কোরিয়া ও সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলোর মানুষের মাঝে রোগ ব্যধীর পরিমান কম। বায়ো এনার্জেটিক পণ্যের ব্যবহার সারা বিশ্বেই খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থাৎ চাহিদা যত বাড়বে, আপনার ব্যবসাও তত বৃদ্ধি পাবে। 
৪। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত এই বায়ো এনার্জেটিক ব্রেসলেট ১০০ ভাগ পাশর্্ব প্রতিক্রিয়াহীন। তাই যে কোন মানুষই নির্ভয়ে এটি ব্যবহার করতে পারে। 
৫। প্রডাক্টটি ব্যবহার করা অত্যন্ত সহজ এবং এটি সার্বক্ষণিক শরীরে কাজ করে। 
৬। প্রোডাক্টটির গুণাগুন বহু বছর যাবত অক্ষুন্ন থাকে। 
৭। অলংকার হিসেবেও এটি এখন অনেকের কাছে সমাদৃত হচ্ছে। 
৮। দামের দিক থেকেও বাংলাদেশে এই পণ্যটির দাম বিশ্বের যে কোন দেশের চেয়ে কম। আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারতের যে কোন জুয়েলারি দোকানে এটি কিনতে গেলে ৬ হাজার রুপির এক রুপিও কম নেবে না। অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় সাড়ে ৯ হাজার টাকা। সেখানে বাংলাদেশে এটি বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৫ হাজার ৮শ' টাকায়। সাথে থাকছে অসাধারণ এক ব্যবসার সুযোগ। 

এখন আপনিই বলুন, এই ব্রেসলেটটি বিক্রি করা কি খুবই কঠিন হবে?

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং, বাংলাদেশ ও বর্তমান বিশ্ব

লক্ষ্য করুন, প্রত্যেকটি মানুষই জন্মগতভাবেই এক একজন নেটওয়ার্কার। কীভাবে? আপনি বাজারের কোন একটি দোকান থেকে শার্ট কিনলেন। দোকানের মালিকের আন্তরিকতা, সততা এবং দামের বিষয় বিবেচনা করে দোকানটি আপনার খুবই পচ্ছন্দ হলো। আপনি আপনার এক বন্ধুকে বললেন, শার্ট কিনতে হলে ওই দোকানেই যাবি। তাহলে ঠকবি না। এখানে আপনি কিন্তু ওই দোকানের হয়ে একজন নেটওয়ার্কারের কাজ করলেন। তবে এর বিনিময়ে আপনি কিছুই পেলেন না। প্রত্যেকটি শহরের কিছু ভালো খাবারের দোকান থাকে। আপনি সেই হোটেলে খাওয়ার পর যদি ভালো লাগে, আপনি অপর এক বন্ধুকে বলেন। সেও সেখানে খেতে যায়। সে আবার অপর এক পরিচিতকে বলে। সেও ওই হোটেলে খেতে যায়। অর্থাৎ প্রত্যেকটি মানুষই জন্মগতভাবেই নেটওয়ার্কিং-এর কাজ করে। আর এটাই হলো নেটওয়ার্কিং বিজনেস। 
উপরে যেসব নেটওয়ার্কিং-এর কথা বলা হলো, সেগুলো মানুষ অবচেতন মনেই করে। তার নেটওয়ার্কিং-এর কারণে কোন কোন ব্যবসায়ীরা প্রচুর লাভ করছে, কিন্তু সেই লাভের বিন্দুমাত্রও আপনি পাচ্ছেন। নেটওয়ার্কিং বিজনেসটাও হলো, ওই একইভাবে আপনি নেটওয়ার্কিং করবেন, এবং লাভবানও হবেন। 
নেটওয়ার্ক মার্কেটিং বা ডাইরেক্ট মার্কেটিং পদ্ধতি ১৯৪০-৪১ সালে আমেরিকান একজন ফুড-কেমিস্ট রেইন বোর্গ প্রথম চালু করেছিলেন। তিনি প্রাকৃতিক সার ব্যবহার করে উৎপাদিত শাক সবজি থেকে একটি খাদ্য প্রাণ বা ভিটামিন এর ফর্মুলা তৈরি করে সেই ভিটামিন বিপণন প্রক্রিয়ায় গতানুগতিক বিপনন পদ্ধতিকে অনুসরণ না করে একটু ভিন্ন ধারায় সরাসরি পণ্যটি ভোক্তার নিকট বিপণনে আগ্রহী হন। তার উদ্ভাবিত বিপনন পদ্ধতিতে প্রচলিত বিজ্ঞাপন পদ্ধতিকে বর্জন করে ভোক্তার মৌখিক প্রচার পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে অর্থাৎ বেকার এবং স্বল্প আয়ের চাকুরীজীবীদের বা যে কোন পার্ট টাইম আয়ে উৎসাহীদের মুখে মুখে প্রচার পদ্ধতিতে কাজে লাগানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়। পণ্যের উপর অধিক বিজ্ঞাপনজনিত খরচ, শোরুম ও অন্যান্য মূল্য সংযোজন না করে এবং একাধিক মধ্যস্বত্বভোগীরে বাড়তি খরচ বাঁচিয়ে তা নেটওয়ার্ক কর্মীদের মাঝে তাদের স্ব স্ব যোগ্যতা অনুযায়ী বন্টন করাই ছিল ড. কার্ল রেইন বোর্গের আধুনিক বিপণন পদ্ধতির মূল উদ্দেম্য। দীর্ঘ ১৮ বছর পর ১৯৫৮ সালে আমেরিকার পার্লামেন্টে ভোটাভুটির মাধ্যমে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং বৈধ মার্কেটিং পদ্ধতি হিসেবে অনুমোদন লাভ করে। 
বিশ্বজুড়ে একথা উজ্জলতম সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত যে, যদি কোন উৎপাদিক পণ্য বা সেবার যথাযথ বাজার বা মার্কেট না থকে, তাহলে সকল আয়োজন ধুলিসাত হবে, থেমে যাবে উৎপানকারী প্রতিষ্ঠানের চলমান গতি। সকল উদ্যোক্তাই এ ব্যাপারে একমত যে, মার্কেটিং বিভাগ সফল না হলে কোন প্রতিষ্ঠানই টিকে থাকতে পারে না। এসব বিবেচনা থেকেই বিশ্বব্যাপী রথী-মহারথী, উদ্যোক্তা ও মার্কেটিং বিশষজ্ঞরা এক্ষেত্রে বিভিন্ন কর্মপদ্ধতি, নীতি ও প্রয়োগিক দিক নিয়ে বিস্তর গবেষনা করেছেন। সে প্রেক্ষাপটে একথা গৌরবের সাথে বলা যায় যে, মাত্র কয়েক দশকে পণ্য বিপণন ক্ষেত্রে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং পদ্ধতিটি সমগ্র বিশ্ব জুড়ে অত্যন্ত সফল একটি মার্কেটিং কনসেপ্ট হিসেবে সকলের আস্থা অর্জন করেছে। পদ্ধতিগত বৈশিষ্ট্য, প্রয়োগশৈলীর নিপুণতা এবং গণমুখী প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে এটিকে সর্বশ্রেষ্ঠ মার্কেটিং পদ্ধতির রূপ পরিগ্রহে সহযোগীতা করছে। 
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এখানকার অধিকাংশ মানুষের নেটওয়ার্কিং ব্যবসা সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাব রয়েছে। তাছাড় প্রথম দিকে এখানে নেটওয়ার্ক মার্কেটিংয়ের চর্চাটাও সঠিকভাবে হয়নি। চুন খেয়ে গাল পুড়ে যাওয়ার কারণে এখন দই দেখলেও ভয় পাচ্ছে অধিকাংশ মানুষ। 
তবে আশার কথা, বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষ নেটওয়ার্ক মার্কেটিংয়ের সৌন্দর্য ও পজেটিভ দিকগুলো খুব দ্রুতই বুঝে উঠতে সক্ষম হচ্ছে।

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং, বাংলাদেশ ও বর্তমান বিশ্ব - Enloving  বাংলা

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং, বাংলাদেশ ও বর্তমান বিশ্ব
লক্ষ্য করুন, প্রত্যেকটি মানুষই জন্মগতভাবেই এক একজন নেটওয়ার্কার। কীভাবে? আপনি বাজারের কোন একটি দোকান থেকে শার্ট কিনলেন। দোকানের মালিকের আন্তরিকতা, সততা এবং দামের বিষয় বিবেচনা করে দোকানটি আপনার খুবই পচ্ছন্দ হলো। আপনি আপনার এক বন্ধুকে বললেন, শার্ট কিনতে হলে ওই দোকানেই যাবি। তাহলে ঠকবি না। এখানে আপনি কিন্তু ওই দোকানের হয়ে একজন নেটওয়ার্কারের কাজ করলেন। তবে এর বিনিময়ে আপনি কিছুই পেলেন না। প্রত্যেকটি শহরের কিছু ভালো খাবারের দোকান থাকে। আপনি সেই হোটেলে খাওয়ার পর যদি ভালো লাগে, আপনি অপর এক বন্ধুকে বলেন। সেও সেখানে খেতে যায়। সে আবার অপর এক পরিচিতকে বলে। সেও ওই হোটেলে খেতে যায়। অর্থাৎ প্রত্যেকটি মানুষই জন্মগতভাবেই নেটওয়ার্কিং-এর কাজ করে। আর এটাই হলো নেটওয়ার্কিং বিজনেস। 
উপরে যেসব নেটওয়ার্কিং-এর কথা বলা হলো, সেগুলো মানুষ অবচেতন মনেই করে। তার নেটওয়ার্কিং-এর কারণে কোন কোন ব্যবসায়ীরা প্রচুর লাভ করছে, কিন্তু সেই লাভের বিন্দুমাত্রও আপনি পাচ্ছেন। নেটওয়ার্কিং বিজনেসটাও হলো, ওই একইভাবে আপনি নেটওয়ার্কিং করবেন, এবং লাভবানও হবেন। 
নেটওয়ার্ক মার্কেটিং বা ডাইরেক্ট মার্কেটিং পদ্ধতি ১৯৪০-৪১ সালে আমেরিকান একজন ফুড-কেমিস্ট রেইন বোর্গ প্রথম চালু করেছিলেন। তিনি প্রাকৃতিক সার ব্যবহার করে উৎপাদিত শাক সবজি থেকে একটি খাদ্য প্রাণ বা ভিটামিন এর ফর্মুলা তৈরি করে সেই ভিটামিন বিপণন প্রক্রিয়ায় গতানুগতিক বিপনন পদ্ধতিকে অনুসরণ না করে একটু ভিন্ন ধারায় সরাসরি পণ্যটি ভোক্তার নিকট বিপণনে আগ্রহী হন। তার উদ্ভাবিত বিপনন পদ্ধতিতে প্রচলিত বিজ্ঞাপন পদ্ধতিকে বর্জন করে ভোক্তার মৌখিক প্রচার পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে অর্থাৎ বেকার এবং স্বল্প আয়ের চাকুরীজীবীদের বা যে কোন পার্ট টাইম আয়ে উৎসাহীদের মুখে মুখে প্রচার পদ্ধতিতে কাজে লাগানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়। পণ্যের উপর অধিক বিজ্ঞাপনজনিত খরচ, শোরুম ও অন্যান্য মূল্য সংযোজন না করে এবং একাধিক মধ্যস্বত্বভোগীরে বাড়তি খরচ বাঁচিয়ে তা নেটওয়ার্ক কর্মীদের মাঝে তাদের স্ব স্ব যোগ্যতা অনুযায়ী বন্টন করাই ছিল ড. কার্ল রেইন বোর্গের আধুনিক বিপণন পদ্ধতির মূল উদ্দেম্য। দীর্ঘ ১৮ বছর পর ১৯৫৮ সালে আমেরিকার পার্লামেন্টে ভোটাভুটির মাধ্যমে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং বৈধ মার্কেটিং পদ্ধতি হিসেবে অনুমোদন লাভ করে। 
বিশ্বজুড়ে একথা উজ্জলতম সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত যে, যদি কোন উৎপাদিক পণ্য বা সেবার যথাযথ বাজার বা মার্কেট না থকে, তাহলে সকল আয়োজন ধুলিসাত হবে, থেমে যাবে উৎপানকারী প্রতিষ্ঠানের চলমান গতি। সকল উদ্যোক্তাই এ ব্যাপারে একমত যে, মার্কেটিং বিভাগ সফল না হলে কোন প্রতিষ্ঠানই টিকে থাকতে পারে না। এসব বিবেচনা থেকেই বিশ্বব্যাপী রথী-মহারথী, উদ্যোক্তা ও মার্কেটিং বিশষজ্ঞরা এক্ষেত্রে বিভিন্ন কর্মপদ্ধতি, নীতি ও প্রয়োগিক দিক নিয়ে বিস্তর গবেষনা করেছেন। সে প্রেক্ষাপটে একথা গৌরবের সাথে বলা যায় যে, মাত্র কয়েক দশকে পণ্য বিপণন ক্ষেত্রে মাল্টি লেভেল মার্কেটিং পদ্ধতিটি সমগ্র বিশ্ব জুড়ে অত্যন্ত সফল একটি মার্কেটিং কনসেপ্ট হিসেবে সকলের আস্থা অর্জন করেছে। পদ্ধতিগত বৈশিষ্ট্য, প্রয়োগশৈলীর নিপুণতা এবং গণমুখী প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে এটিকে সর্বশ্রেষ্ঠ মার্কেটিং পদ্ধতির রূপ পরিগ্রহে সহযোগীতা করছে। 
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এখানকার অধিকাংশ মানুষের নেটওয়ার্কিং ব্যবসা সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাব রয়েছে। তাছাড় প্রথম দিকে এখানে নেটওয়ার্ক মার্কেটিংয়ের চর্চাটাও সঠিকভাবে হয়নি। চুন খেয়ে গাল পুড়ে যাওয়ার কারণে এখন দই দেখলেও ভয় পাচ্ছে অধিকাংশ মানুষ। 
তবে আশার কথা, বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষ নেটওয়ার্ক মার্কেটিংয়ের সৌন্দর্য ও পজেটিভ দিকগুলো খুব দ্রুতই বুঝে উঠতে সক্ষম হচ্ছে।

মাল্টিলেভেল মার্কেটিং এর শর‌য়ী বিধান

এমএলএম এর আবিস্কার


১৯৪০ সালে আমেরিকার একজন কেমিস্ট ডাঃ কার্ল রেইন বোর্গ কর্তৃক সর্বপ্রথম প্রবর্তিত হয় এ পদ্ধতিটি। তার কোম্পানীর নাম ছিল ক্যালিফোর্নিয়া ভিটামিন কোম্পানী। ১৯৪০ সাল থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত সারা বিশ্বে ১২৫টিরও বেশি দেশে প্রায় ১২৫০০ এর বেশি কোম্পানীর অধীনে প্রায় ৩০ কোটিরও বেশি ডিষ্ট্রিবিউটর কাজ করছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে এমএলএম পদ্ধতিতে পরিচালিত বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেমনঃ ডেসটিনি-২০০০ লিঃ, সেপ প্রাঃ লিঃ, ড্রিম বাংলা, নিউওয়ে বাংলাদেশ, আল-ফালাহ কমিউনিকেশন বিজনেস, ডটকম শ্যাকলী, ট্যাংচং এফ.আই.সি, আয়্যমওয়ে কর্পোরেশন, জিজি এন, মডার্ণ হারবাল ফুডস প্রাঃ লিঃ, মেরিকে কসমেটিক ইত্যাদি। তন্মধ্যে ডেসটিনি-২০০০ লিঃ ও এফ.আই.সি. উল্লেখযোগ্য।

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ইসলামের দৃষ্টিতে কতটুকু বৈধতার দাবি রাখে এ নিয়ে ইতোমধ্যে পক্ষে বিপক্ষে বিভিন্ন প্রকার প্রবন্ধ-নিবন্ধ, বই-পুস্তক প্রকাশ ও যুক্তি-তর্ক শুরু হয়েছে। এ ধারাবাহিকতায় ইসলামের দৃষ্টিতে এমএলএম পদ্ধতি ব্যবসাটির বিধান সম্পর্কে কিছু লেখা সময়ের দাবি বলে মনে করি। প্রথমে বুঝা যাক এমএলএম ব্যবসাটির ধরণ বা পদ্ধতি কি? ও এমএলএম বা মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কাকে বলে?

এমএলএম (মাল্টিলেভেল মার্কেটিংএররূপরেখা

এমএলএম (মাল্টিলেভেল মার্কেটিং) পদ্ধতি সম্পর্কে লেখা বিভিন্ন বইপত্র, কোম্পানীগুলোর নীতিমালা, ফরম ও পণ্য তালিকা, তাদের সেমিনারের বক্তব্য এবং সংশ্লিষ্ট লোকদের ব্যাখ্যাসমূহ থেকে এমএলএম (মাল্টিলেভেল মার্কেটিং) এর যে পরিচয় পাওয়া যায় তা হলোঃ-

১. এমএলএম (মাল্টিলেভেল মার্কেটিং)পদ্ধতির প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের মাধ্যমে পরিবেশক নিয়োগ করে থাকে।

২. পরিবেশক হতে হলে তাদের থেকে তাদের নির্ধারিত মূল্যে পণ্য খরিদ করতে হয়।

৩. পণ্য খরিদ করা ছাড়া যেহেতু তাদের ডিষ্ট্রিবিউটর (পরিবেশক) হওয়া যায় না, এজন্য তাদের কর্মীবাহিনীর উপাধি হল ক্রেতা-পরিবেশক।

৪. কোম্পানীর পরিবেশক হওয়ার পর সে যদি কোম্পানীর নিয়মে দু’জনকে ক্রেতা-পরিবেশক বানায় তাহলে এর বিনিময়ে সে কোম্পানী হতে কমিশনের নামে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পায়। এরপর এ দু’ব্যক্তি যদি আরো চারজনকে ক্রেতা-পরিবেশক বানায় তাহলে এ দু’ব্যক্তি ও প্রথমোক্ত ব্যক্তি কমিশন পাবে। এভাবে দু’দিকের নেটওয়ার্ক যতই দীর্ঘ হবে ততই উপরের লোকদের কমিশন বাড়তে থাকবে।

৫. চার নম্বরে বর্ণিত নেট সিস্টেমটিই হল এমএলএম এর মূল বৈশিষ্ট। পুঁজি ছাড়া রুজী এর উপরই তাদের প্রচারণার ভিত্তি। এ শ্রম ছাড়া বিনিময়ের আশায় লোকজন তাদের সাথে যোগ দেয়।

৬. মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতির মূল বৈশিষ্টে সব কোম্পানী একমত। তবে কোম্পানী ভেদে প্রত্যেকের নিয়মাবলী, কমিশন বন্টনের পদ্ধতি ও কমিশনের পরিমাণ ভিন্ন রকম।

৭. ডান ও বাম উভয় পার্শ্বের নেট না চললে কোন ব্যক্তি কমিশন পাবে না। যেমন কেউ যদি শুধু একজন ক্রেতা-পরিবেশক বানায় তাহলে সেও কমিশন পাবে না, তার উপরের স্তরের ব্যক্তিগণও কমিশন পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবে না।

ডেসটিনি-২০০০ লিঃ কর্তৃক প্রকাশিত “বিক্রয় ও বিপণন পদ্ধতি” পুস্তিকা থেকে এমএলএম (মাল্টিলেভেল মার্কেটিং) এর পদ্ধতি নিম্নে তুলে ধরা ধরছি। উক্ত পুস্তিকার ১০ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে:
মূল ধারণাটি হচ্ছে এ রকম, (ধরুণ আপনি) একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের পণ্য (৫০০-১০০০) পয়েন্ট ডেসটিনি-২০০০ লিঃ থেকে ক্রয়ের মাধ্যমে কোম্পানীর একজন সক্রিয় ক্রেতা-পরিবেশক হলেন। প্রাথমিকভাবে দু’জন ক্রেতা-পরিবেশক সৃষ্টির মাধ্যমে নিজস্ব সেলস টিম তৈরির প্রক্রিয়ায় কাজ করতে পারে। এরপর পরবর্তী ক্রেতা-পরিবেশকদ্বয়কে একইভাবে তাদের ব্যবসায়িক নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের ব্যাপারে সর্বাত্নক সহযোগিতা করতে পারবেন। এভাবে ১২ থেকে ১৩টি ধাপে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং টিম তৈরির কাজ করার পর ঐ সমস্ত ক্রেতা-পরিবেশকদের অধীনে গড়ে বাত্তসরিক ৪০০০ ক্রেতা-পরিবেশক সৃষ্টি করা সম্ভব। 

উপরোক্ত পুস্তিকার ৯ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে-

যিনি ইচ্ছে করবেন তিনিই এ প্রতিষ্ঠানের একজন ক্রেতা-পরিবেশক হয়ে পণ্য ক্রয়ের মাধ্যমে এবং দলের অভ্যন্তরে প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে পণ্য বিপণনে অংশগ্রহণ করে বিক্রিত লভ্যাংশের অংশীদার হতে পারবেন। অন্তত একবার পণ্য ক্রয় করা ছাড়া কিংবা অন্য ডিষ্ট্রিবিউটর থেকে তার ডিলারশীপ যোগ্যতা ক্রয় বা হস্তান্তর করা ছাড়া আপনার পক্ষে এখানকার ডিষ্ট্রিবিউটর হওয়ার কোন সুযোগ নেই। 

সহজ করে বুঝার জন্য বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত “ইসলামের দৃষ্টিতে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং ব্যবসা” বই হতে ছক আকারে বিষয়টি তুলে ধরা হল।

----------------------------------------A 
১ম লেভেল ----------B----------------------------------C 
২য় লেভেল ---D-----------E-------------------F-------------G
৩য় লেভেল --H-I---------J-K-----------------L-M----------N-O
৪র্থ লেভেল PQ-RS--TU-VW--XY-Z AB-- BC CD-- DE EF


পূর্বের ছকটির আলোকে ধরা যাক, একটি কোম্পানী নির্ধারিত পণ্য বিক্রয়ের উপর নিম্ন হারে কমিশন দিয়ে থাকে।A নামক এক ব্যক্তি যখন B ও C নামের দু’ব্যক্তিকে ক্রেতা-পরিবেশক বানাল তখন সে পেল ৬০০ টাকা। এরপর ২য় লেভেলের ৪ জন যোগ হওয়ায় প্রথম ব্যক্তি (A) পেল ১২০০ টাকা। আর B ও C প্রত্যেকে পেল ৬০০ টাকা করে ১২০০ টাকা। এরপর ৩য় লেভেলের ৮ জন (২য় লেভেলের ব্যক্তিদের মাধ্যমে) কোম্পানীর ক্রেতা-পরিবেশক হওয়ায় প্রথম ব্যক্তি পেল আরো ৩৬০০ টাকা এবং ২য় (১ম লেভেল-B ও C ) ২ জনের প্রত্যেকে পেল ১২০০ টাকা করে ২৪০০ টাকা। আর ২য় লেভেলের ৪ জনের প্রত্যেকে পেল ৬০০ টাকা করে ২৪০০ টাকা। এরপর ৪র্থ লেভেলের ১৬ জন (৩য় লেভেলের লোকদের মাধ্যমে) ক্রেতা-পরিবেশক হওয়ায় ১ম ব্যক্তি A পাবে ৭২০০ টাকা, ২য় ২ জনের (১ম লেভেলের B ও C) প্রত্যেকে পাবে ৩৬০০ টাকা করে ৭২০০ টাকা, ২য় লেভেলের ৪ জনের প্রত্যেকে পাবে ৬০০ টাকা করে ২৪০০ টাকা, ৩য় লেভেলের ৮ জনের প্রত্যেকে পাবে ৬০০ টাকা করে ৪৮০০ টাকা।

(উল্লেখ্য এখানে টাকার অংক উদাহরণস্বরূপ দেখানো হয়েছে যা প্রতিষ্ঠানভেদে ব্যতিক্রম হতে পারে)। সূত্র- বেফাক।

এমএলএম পদ্ধতির ব্যবসা হারাম  নাজায়েজ

এমএলএম (মাল্টিলেভেল মার্কেটিং) কারবারে শরীয়ত নিষিদ্ধ অনেকগুলো বিষয় যুক্ত হওয়ার কারণে উক্ত পদ্ধতির ব্যবসাটি সম্পূর্ণরূপে নাজায়েজ ও হারাম। যেমন এতে রয়েছেঃ-

১. শর্তসহ ইজারা চুক্তি
২. শর্তসহ ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি
৩. ধোকা বা গারার
৪. শ্রমবিহীন বিনিময়
৫. বিনিময়বিহীন শ্রম
৬. জুয়া বা কেমার
৭. সুদের সন্দেহ
৮. বিদেশী পণ্য দ্বারা বাজার প্রভাবিতকরণ।

উক্ত বিষয়গুলো শরীয়ত নিষিদ্ধ। নিম্নে এক একটি করে সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা হল।


শর্তসহ ইজারা চুক্তি

উল্লিখিত বর্ণনা ও উদ্ধৃতি দ্বারা বুঝা গেল কোম্পানী শুধু পণ্য বিক্রি করছে না, সাথে সাথে ক্রেতা-পরিবেশকও হয়ে যাচ্ছ। অপরদিকে কেউ যদি পরিবেশক বা ডিলার হতে চায় তাহলে সে ডিলার হতে পারছে না। ডিলার হওয়ার জন্য পণ্য কিনা শর্ত। তাদের ভাষায় ডিলার/পরিবেশক/ডিষ্ট্রিবিউটর বা অন্য কোন নাম হলেও ফিকাহ শাস্ত্রের ভাষায় মূলত ঐ ব্যক্তি আজির বা দালাল এর অন্তর্ভুক্ত। এ ধরণের ডিষ্ট্রিবিউটর নিয়োগকে ইসলামী ফিকাহর ভাষায় “আকদে ইজারা” বা ইজারা চুক্তি বলা হয়। ইজারা চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য পণ্য ক্রয় (عقدبيع) শর্ত করা হল। এখানে এক চুক্তির মাধ্যমে দুই চুক্তি হয়ে গেল। যাকে হাদীস ও ফেকাহ শাস্ত্রের ভাষায় صفقتان في صفقة“ এক চুক্তির মাঝে দুই চুক্তি” বলা হয়। এই ধরণের কারবার হাদীসের নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত হওয়ার কারণে নাজায়েজ। নিম্নে এ সংক্রান্ত কয়েকটি হাদীস অনুবাদসহ উল্লেখ করা হল। 

نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عنصفقتين في صفقة واحدةرواه أحمد فيمسنده جص398 ، وقال الهيثمي فيمجمع الزوائد جص48 رجال أحمد ثقات.

একই চুক্তিতে দুটি চুক্তি করা থেকে নবীজী (সাঃ) নিষেধ করেছেন। মুসনাদে আহমদ, খন্ড১, পৃঃ৩৯৮।

ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে আরেকটি হাদীসে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবীজী (সাঃ) ইরশাদ করেন-

لا تحل صفقتان في صفقةرواه الطبرانيفي المعجم الأوسط جص32 وابن خزيمةفي صحيحه برقم 176

একই আকদে দুই আকদ করা হালাল নয়। তাবারানী খন্ড১, পৃঃ৩২, ইবনে খুযাইমা, হাদীস নং ১৭৬।

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন-

صفقتان في صفقة رباأخرجه ابن أبيشيبة جص192 ، وإسناده صحيحإرواءالغليل جص148

একই আকদে দু’টি আকদ করা এক প্রকার সুদ। ইবনে আবী শায়বা, খন্ড৮, পৃঃ১৯২।

تفسد الإجارة بالشروط المخالفة لمقتضىالعقد ، فكل ما أفسد البيع مما مر يفسدها.الدر المختار جص46

আকদে ইজারার প্রাসঙ্গিক নয় এমন শর্তারোপে ইজারা ফাসিদ হয়। তাই পূর্বে বিবৃত যে সব বিষয় বেচাকেনা চুক্তি তথা আকদে বাইকে ফাসিদ করে দেয় সেগুলো ইজারা চুক্তিকেও ফাসিদ করে দেয়। (দুররুল মোখতার, খন্ড৩ পৃঃ৪৬)।

একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কোম্পানী কর্তৃক ডিলার বা ডিস্ট্রিবিউটর তথা দালাল নিযুক্তির সাথে কোম্পানী থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য ক্রয়ের শর্তারোপ সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক একটি শর্ত। তাছাড়া এতে রয়েছে বিক্রেতা পক্ষ বা কোম্পানীর স্বার্থ। তাই এ শর্তের কারণে ইজারা চুক্তিটি ইসলামী শরীয়ার দৃষ্টিতে ফাসিদ বলে গণ্য হবে। এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।

শর্তসহ ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি

মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতিতে যেমন রয়েছে শরীয়ত নিষিদ্ধ শর্তসহ ইজারা চুক্তি (إجارة معالعقد) তেমনি রয়েছে শর্তসহ ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি (بيع مع الشرط)।

ক্রয়-বিক্রয়ের মূলনীতি হল, ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যে যদি ক্রয়-বিক্রয় প্রসঙ্গ নয় এমন কোন শর্ত লাগানো হয় যাতে ক্রেতা বা বিক্রেতার স্বার্থ জড়িত থাকে তা বিক্রিত পণ্যের (তা প্রাণী জাতীয় হলে) স্বার্থ জড়িত থাকে তাহলে ক্রয়-বিক্রয় ফাসিদ হয়ে যায়। যেমন হেদায়া গ্রন্থ প্রণেতা এ মর্মে লিখেন-

كل شرط لا يقتضيه العقد وفيه منفعة لأحدالمتعاقدين أو للمعقود عليه وهو من أهلالاستحقاق يفسدهالهداية جص34

যে শর্ত ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তির প্রাসঙ্গিক নয়, অথচ এতে ক্রেতা-বিক্রেতা কোন একজনের বা বিক্রিত পণ্যের (জীবজন্তু হওয়ার ক্ষেত্রে) স্বার্থ জড়িত থাকে তাহলে এরূপ শর্ত আকদে বাইকে (ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি) ফাসিদ করে দেয়। হেদায়া, খন্ড৩, পৃঃ৩৪।

এ মর্মে আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে-

نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن بيعوشرطرواه الطبراني في المعجم الأوسطوالحاكم في علوم الحديث كذا في نصبالراية جص17.

রাসূলুল্লাহ (সঃ) শর্তারোপ করে বেচা-কেনা থেকে নিষেধ করেছেন। তাবারানী আলমুজামুল আওসাত ও হাকিম উলুমুল হাদিস গ্রন্থে। নাসবুর রায়াহ গ্রন্থেও এরূপ বর্ণিত আছে। খন্ড৪ পৃঃ১৭।

মাল্টিলেভেল মার্কেটিং এর প্রচলিত ব্যবসা পদ্ধতিতে বিক্রেতার পক্ষ থেকে ডিলারশীপ পাওয়ার শর্তটি অপ্রাসঙ্গিক হওয়ার সাথে সাথে ক্রেতার জন্য লাভজনক একটি শর্ত। তাই এ শর্তারোপের দরুণ ক্রয়-বিক্রয়টি অবশ্যই ফাসিদ, অবৈধ ক্রয়-বিক্রয় বলে গণ্য হবে।

ধোকা বা গারার

এমএলএম পদ্ধতির ব্যবসা নাজায়েজ হওয়ার আরেকটি কারণ হল ধোকা যার আরবী শব্দ গারার। হাদীস নিষিদ্ধ ধোকা বা গারার সম্বলিত হওয়ার কারণে এ পদ্ধতির ব্যবসা নাজায়েজ। ধোকা বা গারার এর সংজ্ঞা নিম্নে দেয়া হল।

ইমাম সারাখসী (রঃ) বলেন-

الغرر ما يكون مستور العاقبة

যার পরিণাম লুকায়িত (অস্পষ্ট) তাই গারার। কিতাবুল মাবসুত, খন্ড১২ পৃঃ১৯৪।

ইমাম কাসানী (রঃ) বলেন-

الغرر هو الخطر الذي استوى فيه طرفالوجود والعدم بمنزلة الشك

গারার হচ্ছে এমন একটি অনিশ্চয়তা যাতে হওয়া এবং না হওয়া উভয় দিকই সন্দেহের সাথে বিদ্যমান থাকে। বাদায়েউস সানায়ে, খন্ড৪, পৃঃ৩৬৬।

ইমাম সীরাজী (রঃ) বলেন-

الغرر من انطوى عنه أمره وخفي عليه عاقبته

পরিণাম অজানা থাকাই গারার। শরহুল মুহাযযাব, খন্ড৯ পৃঃ৩১০।

ইমাম ইবনুল আসীর জাযারী (রঃ) বলেন-

الغرر ما له ظاهر تؤثره وباطن تكرهه ،فظاهره يغر المشتري ، وباطنه مجهول.

যার এমন একটি প্রকাশ্য রূপ রয়েছে যা দ্বারা মানুষ এর প্রতি আকৃষ্ট হয়, কিন্তু এর মধ্যে এমন অদৃশ্য কারণ রয়েছে যে কারণে তা অস্পষ্ট। অতএব এর প্রকাশ্য রূপ ক্রেতাকে ধোকায় ফেলে। আর এক ভিতরের রূপ অজানা। জামেউল উসুল, খন্ড১ পৃঃ৫২৭।

ইমাম ইবনুল কাইয়ুম জাওযী (রঃ) বলেন- 

بيع الغرر هو بيع ما لم يعلم حصوله أو لايقدر على تسليمه أو لا يعرف حقيقة مقداره

বায়উল গারার ঐ কারবারকে বলা হয় যাতে পণ্য বা সেবা পাওয়া যাবে কিনা তা অনিশ্চিত অথবা চুক্তিভুক্ত ব্যক্তি নিজে তা যোগান দিয়ে অক্ষম অথবা যার পরিমাণ অজানা। যাদুল মাআদ, খন্ড৫ পৃঃ৭২৫।

উল্লেখিত সংজ্ঞাগুলো দ্বারা বুঝা যায়, হওয়া বা না হওয়ার অনিশ্চয়তার নামই হল ধোকা বা গারার। আর এটি যে কারবারে বিদ্যমান থাকবে সে কারবারই হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী নিষিদ্ধ হবে।

এমএলএম পদ্ধতির ব্যবসানীতিতেও ধোকা বা গারার রয়েছে। কারণ তাদের নীতিমালা অনুযায়ী প্রথম ডিষ্ট্রিবিউটর লোকটি তার ডাউন লেভেল থেকে কমিশন লাভ করতে থাকবে। অথচ তার নিজের বানানো দু’ব্যক্তি ব্যতিত অন্যদের বিষয়টি সম্পূর্ণই অনিশ্চিত এবং অন্যের কাজের উপর নির্ভরশীল। কারণ তার নিচের নেটগুলোর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অগ্রসর না করলে লোকটি কমিশন পাবে না, যে কমিশনকে কেন্দ্র করে সে কোম্পানীর সাথে যুক্ত হয়েছে।

نقل أبراهيم الحربي أنه سئل عن الرجليكتري الديك ليوقظه لوقت الصلاة ، لا يجوز ،لأن ذلك يقف على فعل الديك ، ولا يمكناستخراج ذلك منه بضرب ولا غيره ، وقديصيح ، وقد لا يصيح ، وربما صاح بعدالوقت ، نقله الإمام شمس الدين بن قدامةالمقدسي في الشرح الكبير على متن المغنيجص319 (باب الإجارة)
 

ইবরাহীম হারবী (রঃ) বর্ণনা করেন, তাকে প্রশ্ন করা হলো ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে যে একটি মোরগ ভাড়া করে তাকে নামাযের সময় ঘুম থেকে সজাগ করার জন্য। তিনি উত্তর দিলেন- জায়েজ হবে না। কারণ এটা মোরগের মরজির ওপর নির্ভরশীল। তার থেকে মারপিট বা অন্য কোন পন্থায় আওয়াজ বের করা সম্ভব না। কোন সময় আওয়াজ করবে, আবার কখনো কখনো করবে না, কখনো বা নামাজের সময়ের পরে আওয়াজ করবে। শারহুল কাবীর, খন্ড৩ পৃঃ৩১৯।

সুতরাং এখানে যেমন মোরগ থেকে উপর্কৃত হওয়া অনিশ্চিত হওয়ার কারণে ইজারা চুক্তিটি নাজায়েজ হয়েছে, এমএলএম কারবারেও নীচের লেভেলের মাধ্যমে কমিশন পাওয়া অনিশ্চিত হওয়ার কারণে ইজারা চুক্তিটি নাজায়েজ হবে।

শ্রমবিহীন বিনিময়

এমএলএম (মাল্টিলেভেল মার্কেটিং) পদ্ধতির ব্যবসাটি নাজায়েজ হওয়ার আরেকটি কারণ হল এতে রয়েছে শ্রমবিহীন বিনিময় ও বিনিময়হীন শ্রম যা শরীয়ত সমর্থন করে না।

এমএলএম (মাল্টিলেভেল মার্কেটিং) পদ্ধতির নীতিমালায় রয়েছে যে, কোন ব্যক্তি নির্ধারিত মূল্যের পণ্য খরিদ করে ক্রেতা-পরিবেশক হওয়ার পর সে যদি দু’জন ক্রেতা কোম্পানীর জন্য নিয়ে আসে এবং তারা প্রত্যেকে আরো চারজঙ্কে এবং এ চারজন আরো আটজনকে কোম্পানীর সাথে যুক্ত করে তবে প্রথম ব্যক্তি এবং দ্বিতীয় লেভেলের দুই ব্যক্তি নিম্ন লেভেলের আট ব্যক্তি ক্রেতা-পরিবেশকের সুবাদেও কোম্পানী থেকে কমিশন পেয়ে থাকে।
অথচ এ আটজনের কাউকেই তারা (প্রথম ব্যক্তি এবং ২য় স্তরের দু’জন) কোম্পানীর সাথে যুক্ত করেনি, বরং সংশ্লিষ্ট কোম্পানীগুলোর আইন অনুযায়ী এরা কোম্পানীর সাথে যুক্ত হয়েছে এবং নির্ধারিত হারে কমিশন পাচ্ছে। বুঝা গেল এমএলএম কারবারে শ্রমবিহীন বিনিময় বিদ্যমান।

বিনিময়হীন
 শ্রম
 

এমনিভাবে এতে রয়েছে বিনিময়হীন শ্রম। কেননা, কোম্পানীর নীতিমালা অনুযায়ী কেউ যদি নির্ধারিত পয়েন্টের একজন ক্রেতা জোগাড় করে। কিন্তু আরেকজন জোগাড় করতে না পারে অর্থাৎ ডান ও বাম উভয় দিকের নেট না চলে, সে কমিশন পায় না। এমনিভাবে কেউ যদি দু’জন ক্রেতাও কোম্পানীকে এনে দেয়, কিন্তু তারা কোম্পানীর নির্ধারিত পয়েন্ট থেকে কম পয়েন্টের মালামাল খরিদ করে তাও ঐ ব্যক্তি কমিশন পায় না। যেমন ডেসটিনি-২০০০ লিঃ এবং সেপ বাংলাদেশ প্রাইভেট লিমিটেডের নিয়ম অনুযায়ী একজন ব্যক্তিকে তার ডান এবং বাম উভয় পাশে দু’জনের নিকট নূয়নতম ৫০০ করে ১০০০ পয়েন্টের পণ্যের ক্রেতা আনতে হয়। যদি কেউ একজন ক্রেতার নিকট ৫০০ পয়েন্টের পণ্য বিক্রি করাল কিন্তু অন্যজন আনতে ব্যর্থ হল তবে এর জন্য লোকটি কোন কমিশন পাবে না। এমনিভাবে যদি কোন ক্রেতা-পরিবেশক উভয় পাশে ১০০ পয়েন্ট করে ২০০ পয়েন্ট পরিমাণ পণ্যের ২জন ক্রেতা কোম্পানীকে এনে দেয় তবে ঐ ২০০ পয়েন্ট বিক্রির জন্য লোকটি কোম্পানী থেকে কমিশন পাবে না। কিন্তু ঐ দু’জন কোম্পানীর (অন্তর্বর্তীকালীন) পরিবেশক হিসাবে যুক্ত হয়ে তাদের নেট অগ্রসর করার সুযোগ পেয়ে যায়। সুতরাং এ কারবারে রয়েছে বিনিময়হীন শ্রম।

শ্রমবিহীন বিনিময় ও বিনিময়হীন শ্রম এ দু’টিই বাতিল পন্থায় উপার্জন। কেননা, আকদে ইজারার দু’টি মৌলিক দিক রয়েছে। 

১ শ্রম
২ বিনিময়

এই দু’টি বিষয় সুস্পষ্ট থাকা এই আকদের অপরিহার্য শর্ত। দু’টির একটিও যদি পাওয়া না যায় তাহলে তা ফাসেদ হয়ে নিষিদ্ধ তালিকার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।

কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-

ولا تأكلوا أموالكم بينكم بالباطل

তোমরা বাতিল পন্থায় একে অন্যের সম্পদ খেয়ো না। সূরা বাকারা ১৮৮, সূরা নিসা ২৯।

বিখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এবং প্রখ্যাত তাবেঈ হযরত হাসান বসরী (রঃ) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন

أن يأكله بغير عوض অর্থাৎ (বিনিময়ের শর্তযুক্ত আকদে) বিনিময়হীন উপার্জনই হল বাতিল পন্থায় উপার্জন। আহকামুল কুরআন, জাসসাসঃ ২/১৭২।

এমএলএম
 কারবার জুয়ার এক প্রকার
 

এমএলএম কারবার নাজায়েজ হওয়ার আরেকটি কারণ হলো এ পদ্ধতির ব্যবসাও এক প্রকার জুয়া। আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রঃ) গারার এর পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন-

الغرر هو مجهول العاقبة ، فإن بيعه منالميسر الذي هو القمار

যে কারবারের পরিণাম অজানা সে কারবার জুয়ার শামিল। তাকে কেমার বা মাইসির (জুয়া)ও বলা হয়। কুরআন পাকে আল্লাহতায়ালা জুয়াকে হারাম করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে-

إنما الخمر والميسر والأنصاب والأزلام رجسمن عمل الشيطان فاجتنبوه

অর্থাৎ মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্রকার্য বৈ তো আর কিছু নয়। সুতরাং এগুলো থেকে বেঁচে থাক।
এমএলএম কারবারে যে ক্রেতা-পরিবেশক হবেন তিনি কোম্পানীর নীতি অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ মূল্যের দু’জন ক্রেতা যোগাড় করতে পারবেন কিনা? পরিণাম অনিশ্চিত, তাই জুয়ার সাদৃশ্য হয়ে হারাম হবে।

বাজার
 প্রভাবিতকরণ
 

এমএলএম নাজায়েজ হওয়ার আরেকটি কারণ বহির্শক্তি দ্বারা বাজার প্রভাবিতকরণ। এ ধরণের ব্যবসাগুলোর মূল উদ্দেশ্য পণ্য কেনা-বেচা নয়। আসল উদ্দেশ্য হলো কোম্পানীর ডিস্ট্রিবিউটর সেজে কোম্পানী থেকে সুযোগ-সুবিধা লাভ করা। অর্থাৎ কমিশন অর্জন করা। এ ধরণের কোম্পানীর নিকট পণ্যের গুণগতমান বিবেচ্য নয়। এবং এ নিয়ে তাদের প্রতিযোগিতায়ও পড়তে হয় না। বরং কমিশনের লোভ দেখিয়ে গুণগত বিষয় থেকে পার পেয়ে যায়। তাদের এ পদ্ধতি সহজেই বাজারের সাধারণ গতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়। এবং ক্রেতাগণ টাকার লোভে তাদের দিকে ঝুকে পড়ে। আর সাধারণ পদ্ধতিতে একজন ক্রেতা পণ্যের গুনাগুণ যাচাই করার সুযোগ পায় বিধায় পণ্য বিক্রেতাকে পণ্যের গুণাগুণের প্রতিযোগিতায় পড়তে হয়। এমএলএম পদ্ধতি এর বিপরীত। এ পদ্ধতিতে কমিশনের কারণে বাজার একপেশে হয়ে যায়। এবং পণ্যের গুণগতমান এবং ক্রেতার স্বাধীন যাচাই বাছাইয়ের সুবিধা হ্রাস পায় যা ইসলাম পছন্দ করে না। কারণ ক্রয়-বিক্রয় ও যাবতীয় চুক্তির ক্ষেত্রে ইসলামী নীতি হলো- বাজার নিয়ন্ত্রিত হবে পণ্যের গুণগতমান ও ক্রেতা-বিক্রেতার সরাসরি উপস্থিতিতে। অন্য কোন পন্থায় বাজার প্রভাবিত করা শরীয়তে নিষিদ্ধ। এ জন্যেই তো বাজারে প্রবেশের আগেই রাস্তায় গিয়ে বিক্রেতা থেকে পণ্য কিনে এনে বাজারে বিক্রয় করাকে এবং গ্রাম্য ব্যক্তির পক্ষ হয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি করাকে শরীয়ত নিষেধ করেছে। হুজুর (সাঃ) ইরশাদ করেন-

أن النبي صلى الله عليه وسلم نهى أن يبيعحاضر لباد

হুজুর (সাঃ) শহুরে ব্যক্তিকে গ্রাম্য ব্যক্তির উকিল হয়ে বেচাকেনা করতে নিষেধ করেছেন। (মুসলিম)

نهى النبي صلى الله عليه وسلم أن يتلقىالجلب

হুজুর (সাঃ) কোন কাফেলা মালামাল নিয়ে শহরে প্রবেশ করার আগেই সেই মাল কেনার থেকে নিষেধ করেছেন। মুসলিম

সুদের
 সন্দেহ  সাদৃশ্য
 

এমএলএম পদ্ধতি কারবার নাজায়েজ হওয়ার আরেকটি কারণ হল এতে শরীয়তে নিষিদ্ধشبهة الربا বা সুদের সন্দেহ এবং সাদৃশ্য রয়েছে। অথচ এমন কারবার বর্জন করার সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে শরীয়তে। খলীফায়ে রাশেদ হযরত উমর (রাঃ) বলেন دعوا الربا والريبةতোমরা সুদ বর্জন কর এবং এমন জিনিসও বর্জন কর যাতে সুদের সন্দেহ রয়েছে। মুসনাদে ইমাম আহমদ ১/৩৬,৫০ হাদীস ২৪৬, ৩৫০। সুনানে ইবনে মাজা ২/৭৬৪ হাদীস ২২৭৪। এই উক্তি এবং শরীয়তের অন্যান্য দলীলের আলোকে ফুকাহায়ে কেরাম এমন বহু কারবারকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন যেগুলোতে সুদের সন্দেহ ও সাদৃশ্য রয়েছে।

এমএলএম
  শুবহাতুর রিবা বা সুদের সাদৃশ্য
 

আলোচিত মাল্টিলেভেল বা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং পদ্ধতিতে শরীয়তে নিষিদ্ধ সুদের সন্দেহ ও সাদৃশ্য পরিস্কারভাবে বিদ্যমান যার দরুণ এ কারবার নাজায়েজ ও বর্জনীয়।

একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি বুঝা যাক। মনে করি জাকের নামের এক ব্যক্তি ডেসটিনি-২০০০ লিঃ থেকে ১০,০০০ টাকা দিয়ে একটি পণ্য নিল (যার পয়েন্ট ৫০০) এবং নিয়ম অনুযায়ী সে ডিস্ট্রিবিউটরশীপ পেল এবং সে আরো দু’জন ক্রেতা জোগাড় করার মাধ্যমে কমিশন পেল ৬০০ টাকা। এরপর এ দু’জনের বানানো চার ব্যক্তির কারণে আরো পেল ১২০০ টাকা।(এরপর তো কমিশন ও বোনাস চালু থাকছেই)। বলা বাহুল্য, এ সকল সুবিধাই জাকেরকে উদবুদ্ধ করেছে এ কোম্পানীর পণ্য কিনতে। তাহলে দেখা যাচ্ছে সে ১০,০০০ টাকা শুধু ঐ পণ্যটির জন্য দেয়নি বরং তা দেওয়ার পিছনে তার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ঐ কমিশন বা বোনাসগুলো পাওয়া। আর স্বভাবতই তা (পণ্য ও কমিশন) লোকটির দেওয়া টাকা থেকে বেশি যা পরিস্কারভাবেই সুদের সন্দেহ সৃষ্টি করে।

তাছাড়া এমএলএম প্রতিষ্ঠানগুলোর নীতি ও বক্তব্য বিষয়টিকে আরো পরিস্কার করে তোলে। কোন একটি কোম্পানীর পণ্য তালিকা হাতে নিলেই দেখা যাবে তাতে পণ্যের নাম ও মূল্যের পাশাপাশি আরেকটি সংখ্যাও উল্লেখ রয়েছে যার নাম দেয়া হয়েছে পয়েন্ট। অর্থাৎ একজন ব্যক্তি নির্ধারিত মূল্য প্রদান করলে সে শুধু পণ্যই পাচ্ছে না, পাচ্ছে নির্ধারিত সংখ্যার পয়েন্টও; যা তাকে পরবর্তীতে কমিশন পেতে সাহায্য করবে। এবং তার উপরের লেভেলের ব্যক্তিদেরকে প্রদান করবে নির্ধারিত কমিশন।

এখন যদি কেউ নেট চলার কারণে কমিশন পায় তাহলে বোঝা যাবে, নির্ধারিত টাকার মোকাবেলায় নেওয়া পণ্যের সাথে যে পরিবেশক স্বত্বটি সে পেয়েছে এটির ফলেই সে কমিশন পাচ্ছে, যা সুস্পষ্ট সুদ সাদৃশ্য। অন্যদিকে যদি কারো নেট একেবারেই অগ্রসর না হয় তবে সে ক্ষেত্রেও সুদের সন্দেহ থাকছেই। কারণ, সে তো টাকা দিয়েছিল দু’টি উদ্দেশ্যে। 

১ পণ্যের জন্য
২ পরিবেশক হয়ে কমিশন পাওয়ার জন্য।

অথচ ২য়টির কোন সুবিধাই সে পায়নি। অর্থাৎ কিছু টাকা বিনিময়ের অতিরিক্ত থেকেই যাচ্ছে যা শরীয়তের দৃষ্টিতে সন্দেহমূলক সুদ এর আওয়াভুক্ত হয়ে অবশ্যই নাজায়েজ ও বর্জনীয়।

উল্লেখ্য যে, কোন কোন এমএলএম কোম্পানী তাদের সদস্য হওয়ার জন্য পণ্য খরিদের পাশাপাশি নির্ধারিত সংখ্যক নগদ টাকা প্রদানেরও শর্ত করে থাকে। (যেমনঃ নিউওয়ে, ড্রিম বাংলা)। আর এ ক্ষেত্রে ঐ কারবারে সুদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। - সূত্র বেফাক।


NoteThis article is free from the editorial policy of this blog and does not necessarily hold the view of'Return of Islam'

মাল্টিলেভেল মার্কেটিং


 
 কেন মাল্টিলেভেল মার্কেটিং? 
 বেকার ও স্বল্প আয়ের লোকজনের আধুনিক লাইফ-ষ্টাইল প্রতিষ্ঠা করতে স্বল্প পুঁজি, স্বল্প ঝুঁকি স্বল্প শ্রম ও স্বল্প সময় বিনিয়োগ করে স্বাধীনভাবে সততার সাথে, সর্বোপরি হালাল পথে সন্মানজনক একটি বাড়তি আয়ের জন্য মাল্টিলেভেল মার্কেটিং বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে 
  
  
  
  
  মাল্টিলেভেল মার্কেটিং-ই হচ্ছে একমাএ ব্যবসা, যেখানে আয় ব্যয়ের কোন সীমা-রেখা নেই, আছে অবাধ উপার্জনের পথ; কোন পরাধীনতা নেই, আছে স্বাধীন কর্মপ্রেরণা। কোন জবাবদিহিতা নেই, আছে আন্তরিক সহমর্মিতা, যেখানে কারো আদেশ মোতাবেক চলতে হয় নাএমনকি যেখানে কখনো কোনরুপ চাপের কাছে নিজের স্বাধীন স্বত্তাকে বিসর্জন দিতে হয় না 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
কারা করবেন মাল্টিলেভেল মার্কেটিং? 
 উচ্চ শিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিত , বেকার, স্বল্প আয়ের চাকুরীজীবি বা পেশাজীবি, সমাজসেবী, রাজনীতিবিদ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল শ্রেনীর মানুষের বাড়তি আয়ের প্রয়োজন মেটাতে পারে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং ব্যবসা পদ্ধতি 
 


বিকল্প পেশা হিসাবে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং 
    মূল পেশা ঠিক রেখে, অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে বাড়তি আয় অর্জনের একমাএ বিকল্প হচ্ছে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং ব্যবসা পদ্ধতি; যেখানে উচ্চশিক্ষা বা পূর্ব অভিজ্ঞতা দরকার হয় না 
     
     
    মাল্টিলেভেল মার্কেটিং এর সূচনা 
    বিশ্ববাণিজ্যে বিপণন প্রক্রিয়ায় সর্বশেষ সংযোজন মাল্টিলেভেল মার্কেটিং সিষ্টেম বা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং সিষ্টেম এটি ডাইরেক্ট মার্কেটিং সিষ্টেম, ফ্রীডম এন্টার প্রাইজ, হোম-বেজ বিজনেস ইত্যাদি নামেও পরিচিত একজন আমেরিকান কেমিষ্ট ডঃ কার্ল রেইন বোর্গ(Dr. Carl Rehn Bourgh) ১৯৩৪ সালে প্রাকৃতিক সার ব্যবহার করে উপাদিত শাক-সব্জী থেকে ভিটামিন তৈরী করে তাঁরNutrilite Product In Corporated কোম্পানীর মাধ্যমে সর্বপ্রথম এই পদ্ধতির সূচনা করেছিলেন বিশ্বনন্দিত এই বিপণন পদ্ধতিটি ১৯৫৮ সালে আমেরিকার পার্লামেন্ট সিনেট এ অনূমোদন লাভ করে এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়
মাল্টিলেভেল মার্কেটিং এর উদ্দেশ্য 
 পণ্য বিপণন ব্যবস্থায় উপাদনকারী ও ভোক্তার মধ্যকার গুটিকতক এজেন্ট, মিডিয়া, বিজ্ঞাপণ সংস্থা, পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতা, এক কথায় মধ্যস্বত্ত্বভোগকারী শ্রেণীকে প্রত্যাহার করে, ঐ স্থানে ভোক্তাদেরকেই উপাদনকারীর নিকট থেকে সরাসরি বাজার মূল্যে পণ্য ক্রয় ও পরিবেশনের সূযোগ দেয়া হয়, যেন সমাজের অসংখ্য বেকার ও স্বল্প আয়ের মানুষ পার্ট-টাইম বা ফুল টাইম কাজ করে বাড়তি আয় অর্জনের সুযোগ পায়।


ট্রেডিশ্নাল বা প্রচলিত পদ্ধতিঃ 
 

 

এম.এল.এম. এর উপর কিছু কথা (পার্ট-১) যারা জানেন না তাদের জন্য

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কিংবা মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) ব্যবসা পদ্ধতিতে আপনাকে স্বাগতম। বিশ্ব জুড়ে একথা প্রমাণিত যে, উৎপাদিত পণ্য বা সেবার যথাযথ বাজার বা মার্কেটের অনুপস্থিতিতে সকল আয়োজন ধূলিসাৎ হয়ে যায়, থেমে যায় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের গতি। এক্ষেত্রে সকল উদ্যোক্তাই একমত যে, বিপণন কর্মকান্ড সফল না হয়ে কোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানই টিকে থাকতে পারে না। এসব বিবেচনা থেকেই বিশ্বব্যপী রথী-মহারথী, উদ্যোক্তা ও বিপণন বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন কর্মপদ্ধতি, নীতি ও প্রয়োগিক দিক নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেছেন। উদ্ভুত প্রেক্ষাপটে একথা গৌরবের সাথে বলা যা যে, মাত্র কয়েক দশকে পণ্য বিপণন ক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং বা মাল্টি লেভল মার্কেটিং পদ্ধতিটি বিশ্বজুড়ে অত্যন্ত সফল একটি মার্কেটিং কনসেপ্ট বা Mechanism হিসেবে যথেষ্ঠ আস্থা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছে। পদ্ধতিগত বৈশিষ্ট্য, প্রয়োগশৈলী এবং গণমূখী চরিত্র বা প্রকিয়া ধীরে ধীরে এ পদ্ধতিটিকে এযাবৎকালে উদ্ভাবিত আধুনিক বিপণন পদ্ধতি গুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠতম মার্কেটিং পদ্ধতির রূপ পরিগ্রহে উৎসাহিত করেছে।  (প্রত্যেক ব্যক্তি ভিন্ন ভিন্ন ব্যবসা ক্ষেত্র তৈরী করার চেয়ে নেটওয়ার্ক ব্যবসা ক্ষেত্র অপেক্ষাকৃত অধিক নিরাপদ।)

সময়ের চাহিদা পূরণে সক্ষম এই বহুমাত্রিক পণ্য বিপণন ব্যবসায় (Direct Marketing or Network Marketing or Multi-Level Marketing) ডাইরেক্ট মার্কেটিং বা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং বা মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং পদ্ধতিটি বাংলাদেশে সর্বস্তরের মানুষের কাছে ক্রমাগত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। যে প্রেক্ষাপটে এ ব্যবসা দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, তার বিশদ ব্যাখ্যা এ স্বল্প পরিসরে দেয়া না গেলেও একথা নিঃসন্দেহে বালা যায় যে, নেটওয়ার্ক মার্কেটিং বা এম.এল.এম. পদ্ধতি প্রয়োগে বেকারপীড়িত এদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষকে আত্ম-কর্মসংস্থানের পথ দেখিয়েছে, আলোর পথ পেতে সাহায্য করেছে। কর্মবিহীন শিক্ষিত যুবক-যুবতী এ পদ্ধতিতে আত্মকর্মনির্ভর হয়ে সার্বক্ষণিক বা আংশিক শ্রম দিয়ে, যৎসামান্য পুজি বিনিয়োগে বা বিনা পুজিতে (পণ্য বিপণনের মাধ্যমে) নিজেদেরকে স্বাবলম্বী হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। ছাত্র-ছাত্রী, স্বল্প আয়ের চাকুরিজীবী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, সমাজসেবী, রাজনীতিবিদ, এমনকি যে কোন পেশার মানুষকে এ প্দ্ধতি এনে দেয় আর্থিক স্বচ্ছলতা এবং স্বস্তিময় জীবনমান। এজন্য অতি উচ্চ শিক্ষা বা পূর্ব অভিজ্ঞতা অত্যাবশ্যকীয় নয়। আর এজন্য বিশ্বের বহু দেশে এই বিপণন পদ্ধতিটি "Freedom Enterprise" হিসেবে আখ্যায়িত।

এখন আমরা জনবো ডাইরেক্ট মার্কেটিং বা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং বা মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং বলতে যা বুঝায়-"ভোক্তাশ্রেণীর পারস্পরিক সম্পর্ককে তথ্য সরবরাহ ও বিজ্ঞাপনের কাজে বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করে পণ্য দ্রুত এবং সরাসরি ভোক্তার কাছে বিপণন করাটাই ডাইরেক্ট মার্কেটিং বা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এর বৈশিষ্ট্য।"

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আমরা অনেকেই জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহুকাল ধরে পরোক্ষভাবে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এর কর্মটি করে চলছি এবং তা অনেকটা মনের অজান্তে। এবংএকথাটিও সত্য যে, এ সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই তথ্যনির্ভর ধারণাও যথেষ্ট কম।

এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায় যে, আপনি যখন কোন একটি ভাল বই পড়ে বেশ আনন্দ পান, কিংবা কোন ভাল রেষ্টুরেন্টের খাবার খেয়ে উপভোগ করেন বা ভাল একটি সিনেমা বা নাটক দেখে খুব আনন্দ উপভোগ করেন, তখন আপনি এটি আপনার নিজস্ব পরিমণ্ডলের অন্যদের কাছে প্রায়শঃ প্রচার করে থাকেন। আর এ কাজটি আপনি নিছক কথার ছলেই বলে বেড়ান।

যদি কাজটি আপনি প্রতিনিয়ত করে থাকেন তাহলে আপনি অবশ্যই নেটোয়ার্কিং পদ্ধতির কাজটি করে বেড়াচ্ছেন বলে ধরে নেয়া যায় এবং এর ফলে আপনাকে বলা যায় একজন নেটওয়ার্কার। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে আপনার টেওর্য়াক কাজের দ্বারা যে পণ্য বা সেবার ফ্রি বিজ্ঞাপন হয়ে যাচ্ছে, যাবে এর জন্য যে বিপণনকারী সংগঠন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে  (দোকানদার বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি), তাদের কেউই আপনাকে কোন বিপণন কমিশন বা আর্থিক সুবিধা দিচ্ছেন না বা দেবেননা। ন্যূনতম সৌহার্দ্যবোধে আপনাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনও করেননি বা করবেন না, বিনামূল্যে এই বিজ্ঞাপন প্রচারের কাজটি করার জন্যে। তবে নেটওর্য়াক মার্কেটিং প্রতিষ্ঠান আপনার এ ধরণের প্রচারের কারণে যদি কোম্পানীর কোন পণ্য বা সেবা বিপণন হয়ে থাকে, সে জন্য আপনাকে আর্থিক সুবিধা হিসেবে বিপণন কমিশন দিতে আগ্রহী। গতানুগতিক পণ্য বিপণন পদ্ধতির সাথে কাঠামোগত নেটোয়ার্ক বিপণন পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য এটুকুই।

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং পদ্ধতি হচ্ছে, ব্যক্তির সংগে ব্যক্তির (ইন্টার-পার্সোনাল) সম্পর্ককে ব্যবহার করে মৌখিক বিজ্ঞাপনজনিত প্রচারের মাধ্যমে পণ্য বিপণন করা এবং এ ধরনের বিপণনে উদ্বুধ্ধকরনের মাধ্যমে পণ্য উৎপাদনকারী বা উৎস থেকে ভোক্তার কাছে সরাসরি ক্রয়/বিক্রয় সম্পন্ন করা। বাড়তি খরচ পরিহার করে তার একটা বিশাল অংশ ক্রয়/বিক্রয়কারী ভোক্তাশ্রেণীকে একত্রে প্রচারকার্মে অংশগ্রহণ করার জন্য "কমিশন" হিসেবে প্রদান করাই হচ্ছে এ বিপণন পদ্ধতির মূল দর্শন। কারণ এই মৌখিক প্রচার পদ্ধতি ব্যবহারের কারণে পণ্য বিপণন প্রক্রিয়ায় গতানুগতিক মধ্যসত্ত্বভোগীর প্রয়োজন হয় না, ফলে বিপণনে বাড়তি খরচের বিষয়টির বিলুপ্তি ঘটে। এই পদ্ধতিতে পণ্য বা সেবা বিপণনে সাধারণতঃ কোন ব্যয়বহুল শো-রুম খরচ ও বিজ্ঞাপন খরচের প্রয়োজন হয় না। তাই উৎপাদনকারীগণ কিংবা সরবরাহকারীগণ সবাই অধিক পরিমাণ পণ্য খুব সহজে এবং কম খরচে ভোক্তাদের কাছে সরাসরি বাজারজাত করতে সক্ষম হন। এ কারণে এ বিপণন পদ্ধতিটি গতানুগতিক বিপণন প্রক্রিয়ায় ব্যবসা সম্প্রসারণের তুলনায় সংস্কার-সমৃদ্ধ একটি আধুনিক প্রক্রিয়া মাত্র।

পরবর্তী পার্টে ডাইরেক্ট মার্কেটিং বা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং বা এম.এল.এম পদ্ধতির সূচনা নিয়ে আলোচনা করা হবে।