Friday, 31 May 2013

ধর্মনিরপেক্ষতা ও আওয়ামী লীগ | The Daily Sangram 21-07-2011

সৈয়দ মাসুদ মোস্তফাঃ বিগত ১৩ জুলাই রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন,‘আমি মুসলমানও নই, আবার হিন্দুও নই'। মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় তার সরল স্বীকারোক্তির মাধ্যমে ধর্মবিষয়ক তার অবস্থান জাতির কাছে পরিষ্কার করেছেন। তার এই বক্তব্যের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে তিনি কোন ধর্মবিশ্বাসে বিশ্বাসী বা কোন ধর্মের অনুসারী বা প্রচলিত কোন ধর্মের প্রতি আনুগত্যশীল নন বরং তিনি একজন ধর্মবিবর্জিত ব্যক্তি।  মাননীয় মন্ত্রীর এ ধরনের সত্য কথনের জন্য তাকে ধন্যবাদ না জানিয়ে কোন উপায় নেই।

প্রচলিত প্রত্যেক ধর্মের মূলমন্ত্রই হলো স্রষ্টার অস্তিত্বে অকৃত্রিম বিশ্বাস স্থাপন করা। ধর্মভেদে যদিও স্রষ্টার স্বরূপ আলাদা। কিন্তু বোধ-বিশ্বাসের ভিত্তিতে প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীদের কাছে স্রষ্টার অস্তিত্ব অভিন্ন। যে আদর্শ স্রষ্টার অস্তিত্বকে স্বীকার করে না তাকে নাস্তিক্যবাদী আদর্শ বলা হয়ে থাকে। মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় তার অতিচমকপ্রদ মন্তব্যের মাধ্যমে নিজেকে নাস্তিক হিসেবে প্রমাণ করেছেন কিনা তা মূল্যায়নের দায়-দায়িত্ব জনগণের উপর ছেড়ে দেয়াই শ্রেয়তর মনে করছি।

কিন্তু এখন অভিজ্ঞ মহলের প্রশ্ন মাননীয় মন্ত্রীর এ বক্তব্য কী তার একান্ত ব্যক্তিগত না এটা তাদের দলীয় ও রাজনৈতিক আদর্শ। বিষয়টি যদি ব্যক্তিগতই তাহলে এ নিয়ে কাগজ-কলম ও সময় নষ্ট করার কোন কারণ নেই। কিন্তু এটা যদি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দর্শন হয়ে থাকে তাহলে দেশের মানুষ একেবারে উদাসীন থাকতে পারে না বরং এতে জনগণের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।

আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শে বিশ্বাসী একটি ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের  জন্মই হয়েছিল ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ' নাম দিয়ে। তাদের ভাষায় দলীয় নামের সাথে যেসব বিশেষণ থাকলে দলটিকে সাম্প্রদায়িক বা মৌলবাদী বলা হয়, আওয়ামী মুসলিম লীগ  নামে সে বিশেষণ সম্পূর্ণ উপস্থিত। তাই দলকে কথিত সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ মুছে ফেলতেই বোধহয় পরবর্তীতে দলীয় নাম থেকে ‘মুসলিম' শব্দটিকে অতি যত্নসহকারে বিদায় করে দেয়া হয়েছিল। তাদের ভাষায় দলকে সার্বজনীন করার জন্যই এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। তারপরও ১৯৭০ সালের নির্বাচনে খোদ শেখ মুজিব পাকিস্তানের জনগণকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে দেশে কুরআন-সুন্নাহবিরোধী কোন আইন প্রণয়ন করবে না। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছিল। কিন্তু পশ্চিমাদের গর্ধভীয় রাজনীতির কারণেই আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়নি। ফলশ্রুতিতে যা হবার তাই হয়েছে। দীর্ঘ নয় মাসের মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে বিশ্বমানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটেছে। ইতিহাসের সরলীকরণে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয়েছিল। দেশ শাসনও করেছিল প্রায় সাড়ে তিন বছর। এতে তারা কতখানি সফল বা বিফল হয়েছে সে সাক্ষ্য দেয়ার দায়ভার ইতিহাসের উপর ছেড়ে দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

আওয়ামী লীগ ‘৭০-এর নির্বাচনে বা স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালে কখনোই ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠার কথা বলেনি। তারা জনগণের কাছে বলেছিল শোষণ ও বঞ্চনামুক্ত একটি গণতান্ত্রিক সমাজের কথা। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সে কথার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারেনি। ফলে সংবিধানে রাষ্ট্রীয় ৪ মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতার সাথে সমাজতন্ত্রও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। রাষ্ট্রীয় ৪ মূলনীতির মধ্যে গণতন্ত্র স্থান লাভ করলেও তা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। সংবিধানের ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বহুদলীয় গণতন্ত্র হত্যা করে একদলীয় বাকশালী শাসন কায়েম করে তাদের ভাষায় অলঙ্ঘনীয় রাষ্ট্রীয় মূলনীতি ‘গণতন্ত্র'র দাফন-কাফন সম্পন্ন করা হয়েছিল। অবশ্য পরবর্তীতে সংবিধানে ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও সমাজতন্ত্র বাদ দিয়ে সংবিধানের শিরোনামায় সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর আস্থা, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, মুসলিম বিশ্বের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন ও একদলীয় বাকশালী শাসনের পরিবর্তে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ এবার ক্ষমতায় এসে সংবিধানে সর্বশক্তিমান আল্লাহ উপর আস্থা ও মুসলিম বিশ্বের সাথে সুসম্পর্ক তুলে দিয়ে সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ সংযোজন করেছে। একই সাথে তারা সংবিধানে বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলামও বলবৎ রেখেছে। এসব বিষয় পরস্পর অসংগতিপূর্ণ কি-না তা অবশ্য আজকের আলোচ্য বিষয় নয়। সময় পেলে আরেক দিনে এ বিষয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।

১৯৭০ সালের আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইস্তেহারে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা না থাকলেও পরবর্তীতে তা সংবিধানে সংযোজন করে তারা ৪ দশক যাবত জনগণের কাছে প্রচার করে এসেছে যে, ধর্মনিরপেক্ষতাই মানবতার মুক্তির একমাত্র গ্যারান্টি; তথা একটি মহৌষধ। এছাড়া অন্য কোন আদর্শ বা পন্থায় মানবতার মুক্তি বা কল্যাণ কোনভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতা মানুষের জন্য কতখানি কল্যাণকর বা এর স্বরূপটাই বা কী তা-ই এখন আলোচনার বিষয়।

ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাখ্যা, সংজ্ঞা এবং এর স্বরূপ নিয়ে পরস্পরবিরোধী অবস্থান শুধু আমাদের দেশে নয় বরং পুরো বিশ্বেই প্রচলিত আছে। মূলত ধর্মনিরপেক্ষতার অনুসারী-প্রবক্তারা যে ব্যাখ্যা দেন তার নির্যাসটা হলো ব্যক্তির ধর্মবিশ্বাস নিয়ে কোনপ্রকার বাড়াবাড়ি করা যাবে না বরং ব্যক্তি তার নিজস্ব ধর্মাচারণও স্বাধীনভাবে পালন করবে। কোন ধর্মই কোন ব্যক্তির উপর চাপিয়ে দেয়া যাবে না বা কাউকে ধর্ম পালনে বাধ্যও করা যাবে না। ধর্ম ব্যক্তির নিতান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। কেউ ইচ্ছা করলে তার পছন্দ অনুযায়ী ধর্ম পালন করতে পারবে। আবার ইচ্ছা করলে সে কোন ধর্মই মানতে মোটেই বাধ্য নয়। আর ধর্মকে কখনো রাজনীতিতে বা সমাজজীবনের কোন ক্ষেত্রেই সম্পৃক্ত করা যাবে না। এই হলো ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের প্রবক্তা-অনুসারীদের মত।

কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধবাদীদের মতামত সম্পূর্ণ বিপরীত। তারা বলতে চান যে, ধর্মনিরপেক্ষতা মূলত ধর্মহীনতার নামান্তর। যে ব্যক্তি কোন ধর্মেই বিশ্বাসী নয়, তিনিই শুধু ধর্মনিরপেক্ষ হতে পারেন। ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদে যেমন কোন ধর্মবিশ্বাসের স্থান নেই, ঠিক তেমনিভাবে এই মতবাদ ব্যক্তির কোন ধর্ম পালনের অধিকারও স্বীকার করে না। বিরুদ্ধবাদীরা অতি সংক্ষিপ্তভাবে বলতে চান, ধর্মে কোন নিরপেক্ষ স্থান নেই। হয় ব্যক্তিকে কোন ধর্মের অনুসারী হতে হবে, নয়তো ধর্মের বিরুদ্ধেই অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। এখানে  নিরপেক্ষ স্থান কোথায়? বিরুদ্ধবাদীরা যুক্তি-তর্ক ও তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে, আসলে ধর্মনিরপেক্ষতা শুধু ধর্মহীনতাই নয় বরং এ মতবাদ অসহিষ্ণু ও চরমপন্থার ধর্মবিদ্বেষী মতবাদ।

এখন আমরা চেষ্টা করবো উভয়পক্ষের মতামতকে যুক্তিগ্রাহ্য ও গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ পর্যালোচনা করার। ইংরেজি ‘সেক্যুলারিজম' শব্দ থেকেই বাংলা ভাষান্তর করা হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতা। আর এ ভাষান্তর কতখানি যুক্তিযুক্ত তা নিয়েই সর্বাগ্রে আলোচনা হওয়া দরকার।

ইংলিশ সেক্যুলারিজম এবং প্রিন্সিপল্স্ অব সেক্যুলারিজমে নিম্নোক্তভাবে ‘সেক্যুলারিজমের সংজ্ঞায়ন করা হয়েছে- 
i. Secularism is that which seeks the development of the physical, moral and intellectual nature of man to the highest possible point, as the immediate duty of life-which inculcates the practical sufficiency of natural morality apart from Atheism,Theism or the Bible-which selects as its methods of procedure the promotion of human improvement by material means and proposes these positive agreements as the common bond of union, to all who would regulate life by reason and enable it by service (Principles of Secularism,17)

‘ধর্মনিরপেক্ষতা হচ্ছে মানুষের শারীরিক, নৈতিক ও বুদ্ধিভিত্তিক উৎকর্ষের অন্যতম চূড়া। এটি নাস্তিক্যবাদ, আস্তিক্যবাদ এবং বাইবেল থেকে ভিন্ন এক ধারণা যার মাধ্যমে প্রাকৃতিক ন্যায়পরায়ণতা জীবনের প্রধান কর্তব্য হিসেবে বিবেচিত হবে। বস্তুভিত্তিক মানব উন্নয়ন প্রক্রিয়া, ইতিবাচক চিন্তা-চেতনাকে ঐক্যের ভিত্তিতে বিবেচনা, যুক্তির মাধ্যমে জীবন পরিচালনা এবং সেবার মাধ্যমে জীবনকে মহিমান্বিত করা হলো ধর্মনিরপেক্ষতার নিয়মাবলি'।

ii. Secularism is a code of duty pertaining to this life founded on considerations purely human and intended mainly for those who find theology indefinite or inadequate,unreliable or unbelievable.Its essential priciples are three: The improvement on this life by materials means.That science is the available providence  of man.That is good to do  good.Whether there is other good or not,the good of present life is good and it is good to seek that good.(English Secularism,35)

‘ধর্মনিরপেক্ষতা কেবল মানুষের ইহলৌকিক দায়িত্ব সংক্রান্ত নিয়মাবলি এবং যারা ধর্মতত্ত্বকে অপূর্ণ, অস্পষ্ট, আস্থা স্থাপনের অযোগ্য এবং অবিশ্বাস্য মনে করে এই আদর্শ তাদের জন্য। এর মূল উপাদান তিনটি: এক, ইহলৌকিক জীবনের উন্নয়ন কেবল বস্তুর মাধ্যমেই হওয়া সম্ভব। দুই, বিজ্ঞানই মানুষের জন্য একটি প্রাপ্তিসাধ্য ঈশ্বর। তিন, যেকোন ভাল কাজই ভাল। অন্য কোন ভাল থাকুক বা না থাকুক বর্তমান জীবনের জন্য যা ভাল তার সন্ধানই শ্রেয়'।

এ ব্যাপারে Oxford dictionary-র সংজ্ঞা খুবই প্রাণবন্ত ও সুস্পষ্ট- 
Secularism means the doctrine morality should be based solely on regard to the well being of mankind in the present life to exclusion of all consideration drawn from belief in God or in future state.

‘ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ হচ্ছে এমন এক মতবাদ যা মনে করে আল্লাহ বিশ্বাস বা পরকাল বিশ্বাসনির্ভর সকল বিবেচনা থেকে মুক্ত মানব জাতির বর্তমান কল্যাণ চিন্তার ওপর ভিত্তি করে নৈতিকতা গড়ে উঠবে'।

Encyclopedia Britanicaসহ সকল বিশ্বকোষে Secularism-এর অর্থ করা হয়েছে- 
No.1-Secuar spirit or tendency especially a system of political on social philosofy that rejects all forms religious faith. অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ হচ্ছে সেই রাজনৈতিক ও সামাজিক দর্শন যা সকল ধর্মবিশ্বাসকেই প্রত্যাখ্যান করে।

No.2-The view that public education and other matters of civil society should be conducted without the introduction of a religious element.

সুতরাং ধর্মনিরপেক্ষতার একমাত্র অর্থ ধর্মহীনতা, কোন ধর্মের প্রতি আনুগত্যশীল না থাকা বা খোদাদ্রোহিতা। ধর্মনিরপেক্ষতার এসব অর্থ ব্যতীত অন্য কোন অর্থ বা সংজ্ঞা পৃথিবীর কোন ডিকশনারিতে নেই। ধর্মীয় আচরণকে মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে সীমাবদ্ধ রেখে সমাজ জীবনের প্রত্যেক স্তর থেকে ধর্মকে মুক্ত রাখতে হবে এবং সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ধর্মকে পরিত্যাগ করাই এ মতবাদের লক্ষ্য। এ জন্য এ মতবাদকে ‘ধর্মহীন' বলায় অধিক যুক্তিযুক্ত।

উপরের আলোচনা থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম  সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে ‘আমি মুসলমান বা হিন্দু কোনটাই নই' বলে যে মন্তব্য করেছেন তা তার ব্যক্তিগত নয় বরং তাদের রাজনৈতিক দর্শনেরই মর্মবাণী। আসলে ধর্মনিরপেক্ষতা  যে রীতিমত ধর্মহীনতা এতে কোনই সন্দেহের অবকাশ নেই। সে অর্থে কোন ধার্মিক লোকের পক্ষে ধর্মনিরপেক্ষ হওয়ার সুযোগ নেই। অবশ্য নোবেল বিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্যসেন বলেছেন অন্য কথা। তার মতে ধর্মনিরপেক্ষতার উৎপত্তি হিন্দুত্ববাদ থেকে এবং এটি হিন্দুত্ববাদের নবতর সংস্করণ। বাবু সেনের কথাও যদি মেনে নেয়া হয় তাহলে কোন অহিন্দুর পক্ষেও ধর্মনিরপেক্ষ হওয়া সম্ভব নয়। তাই সার্বিক দিকে বিবেচনায় একজন ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ধর্মহীন তো বটেই, বড় জোর সে ব্যক্তি অমর্তসেনের ফর্মুলায় সংস্কারপন্থী হিন্দু হতে পারে। অন্য কোন ধর্মবিশ্বাসের দাবিদার হওয়ার কোন সুযোগ নেই।

কিন্তু আমাদের দেশের কথিত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা নিজেদেরকে অতি ধার্মিক হিসেবে জাহির করতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। অনেক ক্ষেত্রেই তারা ইসলামের সেবক ও রক্ষক সেজে বিড়ালতপসী হয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করেন। নির্বাচন এলেই ধর্মনিরপেক্ষতার পতাকাবাহী শেখ হাসিনা মাথায় পট্টি বেঁধে, হাতে তসবি নিয়ে ওমরা পালন করে অতীত ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে জনগণের করুণা ভিক্ষা করেন। আর নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার পরই আবার তারা বেঁকে বসে দেশ ও জাতিকে ধর্মহীন করার জন্য গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। আর সে ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্যই সংবিধান সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর আস্থা তুলে দিয়ে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সবসময় গণতন্ত্রের জন্য অশ্রুপাত করলেও দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চিন্তা-চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে প্রকারান্তরে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকেই চরমভাবে পদদলিত করেছে। যে দেশের ৯০ ভাগ মানুষ সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর আস্থাশীল ও বিশ্বাসী সে দেশে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের অধিকারের ধুঁয়া তুলে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা স্থাপন করে আল্লাহর উপর আস্থা প্রত্যাহার দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা  করে কাদের উদ্দেশ্য পূরণ করা হয়েছে তা জনমনে প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে।

বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, ধর্মনিরপেক্ষতা শুধু আক্ষরিক অর্থে ধর্মহীনতা নয় বরং মারাত্মক ধর্মবিদ্বেষী খোদাদ্রোহী মতবাদ। এ আদর্শে বিশ্বাসীরা যেমন কোন ধর্মের অনুসারী হতে পারেন না, ঠিক তেমনিভাবে কোন ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীলও নন। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো যদি তাই হয় তাহলে আমাদের দেশের ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী মুখে ধর্মের জয়গান করতে শোনা যায় কেন? এর সোজা-সাপটা জবাব এই হতে পারে যে, আমাদের দেশের মানুষ ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে ধর্মপ্রাণ। তাই ধর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে এ দেশে রাজনীতি করা, জনসমর্থন লাভ ও নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া যাবে না। তাই তারা ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্যই ধর্মনিরপেক্ষতার অপব্যাখ্যা করে এ মতবাদকে ধর্মবান্ধব বলে আখ্যা দেয়ার অপপ্রয়াস চালানো হয় মাত্র। কথিত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের অতীত আচরণ এ কথাই বার বার প্রমাণিত করেছে। দেশে নির্বাচনের সময় এলেই এসব বিড়ালতপসী তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজাধারীরা ধর্মের জন্য কুম্ভীরাশ্রুপাত করে থাকেন। তারা ক্ষমতায় গেলে ধর্মবিরোধী কোন আইন প্রণয়ন করবে না বলেও প্রতিশ্রুতি দেন। আর সে ধারাবাহিকতায় ১৯৭০ সালের নির্বাচনে খোদ শেখ মুজিব জাতির কাছে ওয়াদা করেছিলেন  যে, তারা জনগণের ভোটে ক্ষমতায় যেতে পারলে দেশে কুরআন-সুন্নাহবিরোধী আইন প্রণয়ন করবে না। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার দেশে একটি ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান প্রণয়ন করে দেশ থেকে ধর্ম উৎখাতের জন্য ক্রুসেড ঘোষণা করে। ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের মনোগ্রাম থেকে কুরআনের আয়াত ‘ইকরা বিসমি রাবিব কাললাজি খালাক' ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম থেকে ‘রাবিব জিদনী ইলমা', সলিমুল্লাহ মুসলিম হল থেকে ‘মুসলিম' কাজী নজরুল ইসলাম কলেজ থেকে ‘ইসলাম' শব্দ তুলে দিয়ে চরম ধর্মবিদ্বেষের পরিচয় দেয়। সে সময় দেশে ধর্মীয় রাজনীতিও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। আর এই ধর্মনিরপেক্ষতার ছদ্মাবরণে চরম ধর্মবিদ্বেষের কারণেই তাদেরকে দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল।

 কথিত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের জনগণের সাথে প্রতারণা করার জন্যই তাদেরকে দীর্ঘদিন ক্ষমতার প্রভাব বলয়ের বাইরে থাকতে হয়েছিল। তারা বোধহয় উপলব্ধি করতে পেরেছিল ধর্মবিদ্বেষের কারণেই দেশের মানুষ তাদেরকে আর পছন্দ করে না। তাই ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে আওয়ামী নেত্রী শেখ হাসিনা মাথায় কালো পট্টি বেঁধে, হাতে তসবী নিয়ে ওমরা পালন করে তাপসী রাবেয়া সেজে অতীত ভুলের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে ভোট প্রার্থনা করেছিল। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর তারা তাদের বহিরাবরণ ধরে রাখতে পারেননি বরং তাদের ধর্মবিদ্বেষের স্বরূপ জনসমক্ষে ঠিকই প্রকাশিত হয়েছে। সে সময় আওয়ামী লীগের পাঁচ বছরের শাসনামলে ধর্মের উপর চরম আঘাত করেছিল। বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল ২৫০টি মাদরাসা। আলেম-উলামাদের উপর চালানো হয়েছিল অবর্ণনীয় নির্যাতন। আওয়ামী লীগের কর্মীরা কুকুরের মাথায় টুপি ও গলায় তসবি পরিয়ে নিজের ধর্মদ্রোহিতার স্বরূপ প্রকাশ করেছিল। আর এজন্যই ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনে ধর্মদ্রোহী আওয়ামী অপশক্তির লজ্জাজনক পরাজয় ঘটেছিল।

২০০৬ সালে ৪ দলীয় জোটবিরোধী আওয়ামী নৈরাজ্যের সময় তারা আবারও ধর্মের দোহাই দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ইসলামী ঐক্যজোটের সাথে এক সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে। এ চুক্তির উল্লেখযোগ্য ধারা ছিল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে দেশে কোন কুরআন-সুন্নাহবিরোধী আইন প্রণয়ন করা হবে না। এমনকি আওয়ামী নেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের নির্বাচনে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় অনুরূপ ঘোষণা দিয়েছিলেন। তারা পাতানো ও ষড়যন্ত্রের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে তাদের আধিপত্যবাদী প্রভুদের খুশি করার জন্য দেশ থেকে ইসলাম উৎখাতের এজেন্ডা বাস্তবায়নে নেমে পড়েছে। আর তাদের সে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নকে নির্বিঘ্ন করার জন্যই তারা দেশের স্বনামধন্য ইসলামী ব্যক্তিত্বদের বিরুদ্ধে বানোয়াট ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে কথিত বিচারের নামে ইতিহাসের জঘন্যতম মিথ্যাচার ও প্রহসনের আশ্রয় নিয়েছে। তারা তাদের ধর্মদ্রোহিতার অংশ হিসেবে সংবিধান থেকে সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর আস্থা তুলে দিয়ে ‘বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম' বহাল রেখে আবারও জনগণকে ধোঁকা দিয়ে মারাত্মক ধর্মব্যবসায় অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহর উপর আস্থা তুলে দিয়ে সংবিধানে বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের কোন সার্থকতা আছে বলে দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ মনে করছে না বরং সরকারের এ ধরনের গর্হিত সিদ্ধান্তকে দেশের মানুষ জনগণের সাথে চরম শঠতাই মনে করছে।

আসলে ধর্মনিরপেক্ষতা যে ধর্মহীনতা এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। কিন্তু এ আদর্শের প্রবক্তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্যই সময়-সুযোগমত মানুষকে ধর্মের মহাত্ম্য শোনায়। কিন্তু কাজ ফুরালেই তারা আবার আসল চেহারায় আবির্ভূত হন। অতি সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ ধর্মবিষয়ক যে মন্তব্য করেছেন, তা মোটেই তার ব্যক্তিগত মতামত নয় বরং তা তাদের আদর্শেরই সারবস্তু। মাননীয় মন্ত্রীর অসতর্কতার কারণেই তার মুখ থেকে এমন বেফাঁস মন্তব্য বের হয়েছে। তারা মনে প্রাণে সে আদর্শে বিশ্বাসী হলেও ধর্মপ্রাণ লোকদেরকে বিভ্রান্তির মাধ্যমে হাতে রাখার জন্য তা কখনোই জনসমক্ষে প্রকাশ করেন না। কিন্তু মাননীয় মন্ত্রী এমন মন্তব্য কেন করলেন? অবশ্য নিন্দুকরা (?) এর একটি চমকপ্রদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তারা বলতে চান মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় অভ্যাসগত কারণে প্রায় সময়ই বা কোন কোন সময় বেসামাল থাকেন, তাই হয়ত নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে ব্যর্থ হয়ে নিজেদের কুৎসিত চেহারাটা জনসমক্ষে প্রকাশ করে ফেলেছেন। আর যদি মাননীয় মন্ত্রীর বক্তব্য যদি সুস্থচিন্তার বহিঃপ্রকাশ হয় তাহলে আমরা তাকে সবিনয়ে নিবেদন করবো তিনি যেন আগামী নির্বাচনে জনগণের কাছে ধর্ম সম্পর্কে তার অভিজ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ ঘটান, যদি তিনি সৎসাহসী হয়ে থাকেন!

সৈয়দজাদারা হিন্দুও নন, মুসলমানও নন : ভয় বাড়ছে মুসলমানদের

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে যখন সংকট ঘনীভূত হচ্ছে তেমন এক জটিল সময়ে মতাসীনরা সুচিন্তিতভাবে সংকটকে সংঘাতমুখী করার পদপে নিয়ে চলেছেন। এই চেষ্টার অংশ হিসেবে একদিকে তারা উস্কানিমূলক নানা কথা বলছেন ও বিবৃতি দিচ্ছেন, অন্যদিকে প্রকাশ্যে আসছে তাদের অন্তরালের মিত্রশক্তির বিভিন্ন অপকীর্তি। এই মিত্রশক্তিও সরাসরি উস্কানিদাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। এসবের মধ্য দিয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন দেশের ৯০ শতাংশের বেশি নাগরিক মুসলমানরা।

এ ব্যাপারে মতাসীনদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পর প্রধান ভূমিকা পালন করে চলেছেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্তÑ যাকে সংবিধান বিষয়ক আওয়ামী ‘মোড়ল’ বলা হচ্ছে। পাশাপাশি রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডিমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও। দলের মুখপাত্র হিসেবে সময়ে সময়ে এমন কিছু বক্তব্য তিনি দিচ্ছেন যেগুলো বিতর্কের শুধু নয়, তীব্র সমালোচনারও কারণ ঘটাচ্ছে। যেমন গত ১৩ জুলাই তার কাছে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী সম্পর্কে ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয়েছিল। সেদিন সাংবাদিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের সম্মানে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজের অনুষ্ঠানে বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আশরাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ‘হিন্দুও নন, মুসলমানও নন’! তার জবাব শুনে লা-জবাব হয়ে গেছেন সকলে, এমনকি কট্টর আওয়ামী লীগপন্থী সাংবাদিকরাও। কারণ, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের গুণধর এই পুত্রের কাছে এ ধরনের জবাব কেউ আশা করেননি।

প্রশ্ন উঠেছে, নামে মুসলমান এই ‘সৈয়দজাদা’ মুসলমান তো বটেই, যদি হিন্দুও না হয়ে থাকেন তাহলে তিনি ঠিক কোন ধর্মে বিশ্বাসী? সেটা কি তাহলে শিখ ধর্ম? কারণ, শোনা যায়, সৈয়দ আশরাফ ভারতীয় এক শিখ রমণীকে বিয়ে করেছেন এবং তাদের একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। মা ও মেয়ে বসবাস করেন লন্ডনেÑ যেখানে প্রায়ই জনগণের অর্থ ব্যয় করে উড়াল দিয়ে চলে যান সৈয়দ আশরাফ। প্রশ্ন ওঠার অন্য এক কারণ হলো, বাংলাদেশসহ এই উপমহাদেশের সব মানুষই কঠিনভাবে ধর্মে বিশ্বাসী। তাছাড়া এমনিতেও দেশনির্বিশেষে মানুষ মাত্রই ধর্ম মেনে চলে। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত ও আধুনিক দেশের প্রেসিডেন্টকেও শপথ নিতে হয় খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেল হাতে নিয়ে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক হোসেন ওবামাকেও বাইবেল হাতে নিয়েই শপথ পাঠ করতে হয়েছিল। অর্থাৎ যতো উন্নত ও আধুনিক রাষ্ট্রের মানুষই হোন না কেন, প্রত্যেকেই যার-যার ধর্ম মেনে চলেন। এটাই স্বাভাবিক। কারণ ধর্ম থাকে না কেবল গরু-ছাগল ও ভেড়া ধরনের পশু ও প্রাণীদের। মানুষকে কোনো না কোনো ধর্ম মানতেই হয়। কিন্তু আমাদের এই সৈয়দজাদা ‘ডিজিটাল’ রাজনীতিক বলেই সম্ভবত ধর্মের ব্যাপারে নাক একেবারে উল্টে ফেলার অভিনয় করেছেন।

অভিনয় কথাটা অকারণে বলা হচ্ছে না। একটু খোঁজ-খবর করলেই থলের বেড়াল বেরিয়ে পড়বে। তখন হয়তো জানা যাবে, ভারতের শিখ রমণীকে বিয়ে করতে গিয়ে সৈয়দজাদাকে তার বাপ-দাদার ধর্ম পরিত্যাগ করতে হয়েছিল। কারণ, এই বিয়েরও পেছনে রয়েছে মুসলিমবিরোধী সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। সৈয়দ আশরাফই একমাত্র ব্যক্তি নন। বাংলাদেশের মুসলমানবিরোধী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ব্যাপারে ভারতের পাশাপাশি পাশ্চাত্যের কয়েকটি রাষ্ট্রও অনেকদিন ধরেই পা বাড়িয়ে চলেছে। সে কারণেই এদেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের একাধিক বিশেষজনের গুণধর পুত্ররা একের পর এক ইহুদী রমণীদের বিয়ে করছেন। তাদের ঘরে সন্তানও জন্ম নিচ্ছে। বাড়ছে বাংলাদেশি ইহুদি নাগরিকদের সংখ্যা। তারা আবার যেন-তেন নাগরিক নয়। এক সময় এই ইহুদি নাগরিকদেরকেই উত্তরাধিকার সূত্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রমতায় অধিষ্ঠিত করার পরিকল্পনা রয়েছে ভারত এবং পাশ্চাত্যের রাষ্ট্রগুলোর।

এজন্যই উদ্বেগ বেড়ে চলেছে দেশপ্রেমিক মুসলমানদের মধ্যে। সৈয়দ আশরাফের মন্তব্যের পরিপ্রেেিত তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তারা। যেমন চরমোনাইয়ের পীর সৈয়দ রেজাউল করিম ১৫ জুলাই বলেছেন, সৈয়দ আশরাফ ‘আমি হিন্দুও নই, মুসলমানও নই’ বলায় আওয়ামী লীগের আসল চরিত্র প্রকাশিত হয়েছে। প্রমাণিত হয়েছে তাহলে তারা নাস্তিক-মুরতাদ। এই নাস্তিক-মুরতাদদের জানাযা এবং মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন হবে না। তারা নির্যাতনের পথে ফেরাউন, নমরুদ ও আবু লাহাবের ভূমিকায় নেমেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগকে মনে রাখতে হবে, তারা নমরুদদের চাইতে বড় শক্তি নয়। আল্লাহ নমরুদদের নির্মমভাবে নিশ্চিহ্ন করেছিলেন। তেমনি সৈয়দ আশরাফরাও ধ্বংস হয়ে যাবেন।

একই ধরনের বক্তব্য এসেছে আরো অনেকের প থেকে। এসবের মূলকথায় আওয়ামী লীগের ইসলাম ও মুসলমানবিরোধী গোপন উদ্দেশ্যের দিকটি প্রাধান্য পেয়েছে। বস্তুত এ শুধু রাজনৈতিক বিরোধিতার জন্য বলা হচ্ছে না, বাস্তবেও সত্য হিসেবে প্রমাণিত হচ্ছে। এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বিরোধী দলগুলোকে বাইরে রেখে পাস করা এই সংশোধনীর মাধ্যমে অন্য অনেক বিষয়ের সঙ্গে মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপরও কঠিন আঘাত হেনেছে সরকার। এতে বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ নাগরিক মুসলমানদের চিন্তা, বিশ্বাস ও আকাক্সাবিরোধী অনেক বিষয় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। যেমন সংবিধানের প্রস্তাবনায় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ রাখা হলেও ব্র্যাকেটে দুটি অনুবাদ দেয়া হয়েছে যার দ্বিতীয়টি অশুদ্ধ এবং মুসলমানদের জন্য আপত্তিজনক। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তর নেতৃত্বে মতাসীনরা ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’-এর অনুবাদ করেছেন ‘পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে’। অথচ রাহমান বা রাহীমের অর্থ ‘করুণাময় সৃষ্টিকর্তা’ নয়। তাছাড়া ‘করুণাময় সৃষ্টিকর্তা’ কথাটা প্রধানত অমুসলমানরা বলে থাকে, মুসলমানরা নয়। এর পাশাপাশি সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’কেও বাদ দিয়েছেন মতাসীনরা। পরিবর্তে ধর্মনিরপেতাকে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি রাষ্ট্রধর্মের ব্যাপারেও চাতুরির আশ্রয় নিয়েছেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্তরা। সংবিধানের এ সংক্রান্ত ২(ক) অনুচ্ছেদে পরিবর্তন এনে তারা লিখেছেন, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম হবে ইসলাম; তবে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য ধর্ম পালনে রাষ্ট্র সমমর্যাদা ও সম-অধিকার নিশ্চিত করবে।

পঞ্চদশ সংশোধীতে অন্তর্ভুক্ত এ ধরনের বিধি-বিধানের পাশাপাশি যদি সৈয়দ আশরাফের কথাটাকে মিলিয়ে দেখা হয় তাহলে ভীত-আতঙ্কিত না হয়ে পারা যায় না। পাশাপাশি এমন অনেক ঘটনাও ঘটছে যেগুলোর কারণে মানুষের মুখে মুখে এখন সঙ্গত একটি প্রশ্নই ঘুরে ফিরছে। প্রশ্নটি হলো, আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চায়? প্রশ্নের কারণও কিন্তু মতাসীনরা এবং তাদের দোসররাই সৃষ্টি করছে। উদাহরণ দেয়ার জন্য দেশের জনপ্রশাসনের কথাই উল্লেখ করা যাক। মতায় আসার পরদিন থেকে সরকার একদিকে দলীয় বিবেচনায় ঢালাওভাবে পদোন্নতি ও নিযুক্তি দিয়ে চলেছে, অন্যদিকে অনেককে চাকরিচ্যুত, বঞ্চিত ও অসম্মানিত করেছে। এখনো করছে। প্রথম পে রয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবে পরিচিত অফিসাররা। মেধা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও সিনিয়রিটি থাকুক না থাকুক সরকারের সমর্থক অফিসাররা পদোন্নতি ও আকর্ষণীয় বিভিন্ন পদে নিযুক্তি পেয়েছেন, এখনো পাচ্ছেন। ধর্মীয় পরিচিতিকেও বিশেষ গুরুত্ব ও প্রাধান্য দিচ্ছে সরকার। ভারপ্রাপ্ত সচিবসহ ৭০টিরও বেশি পদে বসানো হয়েছে বিশেষ সম্প্রদায়ের অফিসারদের। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের পাশাপাশি ইউএনও এবং এসি ও ওসিসহ পুলিশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদেও বেছে বেছে বিশেষ ধর্মের লোকজনকেই বসিয়েছে সরকার। অথচ জনসংখ্যার অনুপাতে এবং যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাসহ চাকরির শর্তপূরণের বিচারে এত বেশি সংখ্যক অমুসলিম অফিসারের এভাবে পদোন্নতি এবং স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্তি পাওয়ার কথা নয়। অভিযোগ উঠেছে, অর্থনীতির সঙ্গে প্রত্যভাবে সংশিষ্ট বিভিন্ন করপোরেশনের শীর্ষ পদে আসীন এসব অমুসলিম অফিসারের অনেকে রাষ্ট্রের গোপনীয় তথ্য পাচার করে দিচ্ছেন। তাদের দেশপ্রেমহীন কার্যকলাপে জাতীয় অর্থনীতির সর্বনাশ ঘটছে, বিঘিœত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাও। এর ফলে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার শিকড় মজবুত হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সমর্থক মুসলমান অফিসারদের মধ্যেও বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ছে।

রাষ্ট্রদূতের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং দেশের প্রতিনিধিত্বকারীর চাকরিতেও সুচিন্তিতভাবে কট্টর মুসলিম বিরোধীদের সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। উদাহরণের জন্য বেশি দূরে যাওয়ার বা বেশি খোঁজ-খবর করার পরিবর্তে নেপালে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত নিমচন্দ্র ভৌমিকের কথা উল্লেখ করা যায়। তার প্রধান পরিচয়, তিনি হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক। নেপালে যাওয়ার পর থেকেই নারী কেলেংকারী শুধু নয়, রাজনৈতিক কেলেংকারীতেও জড়িয়ে পড়েছেন তিনি। এরকম এক অভিযোগে জানা গেছে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হলেও একাধিক উপলে নিজের গাড়িতে তিনি ভারতের পতাকা লাগিয়েছেন। নিমচন্দ্রের কারণে নেপালের কূটনৈতিক এলাকায় বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা মাটিতে মিশে গেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও, এমনকি আনুষ্ঠানিক তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার দু’ মাস পরও নিমচন্দ্রকে নেপাল থেকে প্রত্যাহার করা হয়নি। কারণ নাকি নয়াদিল্লির চাপ!

দেশের শিাঙ্গনে ঘটে চলা বিভিন্ন ন্যক্কারজনক অপরাধেরও উল্লেখ করা দরকার। ভিকারুন্নেসা নুন স্কুলের খলনায়ক পরিমল জয়ধর ইতিমধ্যে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। তার সম্পর্কে কথা যতো কম বলা যায় ততো ভালো। কিন্তু যে কথাটা না বলে পারা যায় না তা হলো, এই লম্পটকেও রাজনৈতিক বিবেচনা থেকেই নিযুক্তি দেয়া হয়েছিল। বিশেষ সম্প্রদায়ের প্রতি মতাসীনদের দরদ যে একেবারে উথলে উঠছে তার বড় প্রমাণ, পরিমল জয়ধরের সঙ্গে এমন আরো পাঁচজনকে চাকরি দেয়া হয়েছিল যাদের কেউই মুসলমসান নয়। সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে নিযুক্তিপ্রাপ্ত এই পাঁচজন ছিল বরুণচন্দ্র বর্মণ, বাবুল কর্মকার, প্রণব ঘোষ, বিশ্বজিৎ ও বিষ্ণু চন্দ্র। ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে এ ধরনের নিযুক্তিকে চরম সাম্প্রদায়িক পদপে ছাড়া আর কিছু নিশ্চয়ই বলা যায় না। কথা শুধু এজন্য ওঠেনি। দেখা যাচ্ছে, সুযোগ পেলেই তারা চরম উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে। যেমন দেশে যখন পরিমল জয়ধরকে নিয়ে তোলপাড় চলছিল ঠিক তখনই প্রধানমন্ত্রীর নিজের এলাকা গোপালগঞ্জের আরেক কীর্তিমান শংকর বিশ্বাস রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে ঔদ্ধত্যপূর্ণ কটুক্তি করে বসেছে। এই শংকর টুঙ্গিপাড়া জিটি পাইলট হাই স্কুলের শিক। শংকরের ধৃষ্টতার প্রতিবাদে পুরো গোপলগঞ্জ জেলায় আন্দোলনের ঝড় উঠেছে। বিুব্ধ জনতা তার বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকার যথারীতি বেয়াদব শংকর বিশ্বাসকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়ার ঘোষণা দিয়ে দায়িত্ব পালনে সমাপ্তি টেনেছে। পুলিশ শুনিয়েছে আরো চমৎকার কথা। টুঙ্গিপাড়া থানার ওসি বলেছেন, অপরাধী শংকর বিশ্বাসকে গ্রেফতারের জন্য নাকি ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে। অন্যদিকে স্থানীয় জনগণের অভিযোগ, পুলিশ এবং উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারাই তাকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছে।

কিছুদিন আগে মানিকগঞ্জের অন্য এক হিন্দু শিকও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে একই ধরনের কটুক্তি করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছিল। তারও কোনো বিচার বা শাস্তি হয়নি। সেও আওয়ামী পুলিশের সহযোগিতায় পালিয়ে গেছে। মুসলিম নেতারা অভিযোগ করেছেন, কোনো একজনেরই বিচার হচ্ছে না বলেই নতুন নতুন শংকর বিশ্বাসরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম কটুক্তি করার এবং মুসলমানদের ইমান-আকিদার ওপর আঘাত হানার দুঃসাহস দেখানোর সুযোগ পাচ্ছে। তাদের ধৃষ্টতা সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, স্বাধীনতা পরবর্তী প্রথম আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ও ইসলাম ও মুসলমানবিরোধী কর্মকাণ্ড সর্বাত্মক হয়েছিল। এবার সৈয়দ আশরাফ, পরিমল জয়ধর ও শংকর বিশ্বাসরা ময়দানে এসেছেন, সেবার আওয়ামী ঘরানার কবি নামধারী দাউদ হায়দার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে ব্যঙ্গাত্মক কবিতা লেখার ধৃষ্টতা দেখিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান দেশ থেকে বহিষ্কারের আড়ালে ওই কুলাঙ্গারকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন।

এ ধরনের কোনো ঘটনাকেই বিচ্ছিন্নভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীতে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’কে বাদ দেয়া থেকে সৈয়দ আশরাফের আমি ‘হিন্দুও নই, মুসলমানও নই’ পর্যন্ত বক্তব্য ল্য করে দেখুন। পাশাপাশি দেখুন পরিমল জয়ধর ও শংকর বিশ্বাসরা ঔদ্ধত্য দেখানোর জন্য ঠিক এ সময়টিকেই বেছে নিয়েছে। বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুককে পেটানোর অভিযানে এডিসি হারুনুর রশীদের সঙ্গে যৌথভাবে নেতৃত্ব দিয়েছে পুলিশের এসি বিপ্লব সরকার। সব মিলিয়েই প্রকাশিত হচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য। সে উদ্দেশ্যের মধ্যে ইসলাম ও মুসলমান বিরোধিতা তো রয়েছেই, অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো ভারতকে খুশি করা। মতাসীনরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে মুসলমানদেরকেই দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করতে চান। এজন্যই বেছে বেছে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকেই সংবিধান সংশোধনের কার্যক্রমে ‘মোড়ল’ বানানো হয়েছিল। তিনি করেও দেখিয়েছেন বটে। বলা অপো রাখে না, এখনই প্রতিরোধ গড়ে না তোলা হলে মতাসীনরা তাদের শেষ হাসিটি দেখানোরও চেষ্টা করবেন।

ভাড়া করা সরকারের গোলামদের আবস্হা দেখুন ,ওরা কি বলে ভিডিও সহ


লিখেছেন লিখেছেন এম আবদুল্লাহ ভূঁইয়া ০৪ মে, ২০১৩



সরকারের পা চাটা গোলামদের ভিডিও 

https://www.facebook.com/photo.php?v=305778156219189&set=vb.585214484831241&type=2&theater

তৌহিদী জনতা এক হও 

মূর্তির বা ভাস্কর্যের ব্যাপারে ইসলামের কঠোর নির্দেশন ঃ-

প্রথমে নিম্নের আয়াত ও সহীহ হাদীসগুলোর উপর নজর বুলিয়ে নিন।

৩. আব্দুল্লাহ বিন উমর রা: বলেন, নবী স: বলেছেন, “এই সব প্রতিকৃতির শিল্পীদের খুব শাস্তি দেয়া হবে। বলা হবে, তোমরা যা সৃষ্টি করেছ, তাতে প্রাণ দাও তো।” (বুখারী:২য় খন্ড, পৃ:৮৮০, মুসলিম:২য় খন্ড, পৃ:২০১, রশীদীয়া লাইব্রেরী দিল্লী) (বুখারী:৫৯৫১, মুসলিম:২১০৭)

৪. ইবনে আব্বাস রা: বলেন, আমি নবীজী স: কে বলতে শুনেছি যে, “যে কেউ দুনিয়াতে কোন প্রতিকৃতি তৈরি করবে তাকে কিয়ামতের দিন বাধ্য করা হবে যেন সে তাতে প্রাণ সঞ্চার করে, অথচ সে তা করতে সক্ষম হবে না।” (বুখারী:৫৯৬৩, মুসলিম:২১১০)

৬. আয়েশা রা: বলেন, “নবী স: ঘরে কোন ছবি-মূর্তি কিছু পেলে ছাড়তেন না, বরং তা সাথে সাথে ভেঙে ফেলতেন বা নষ্ট করে ফেলতেন।” (বুখারী:২:৮৮০,আবু দাউদ)

আবু জুহায়ফা রা: বলেন, “নবী স: প্রতিকৃতি নির্মাণকারীদের কঠোর ভাষায় অভিসম্পাত করেছেন।” (বুখারী:২:৮৮১, আবু দাউদ)(বুখারী:৫৯৬২)

“তিনিই আল্লাহ, স্রষ্টা, উদ্ভাবক, আকৃতি দানকারী।” (সূরা হাশর:২৪)

“তিনিই সেই সত্তা যিনি তোমাদের মাতৃগর্ভে যেমন ইচ্ছে তেমন আকৃতি দেন”। (সূরা আলে ইমরান:৬)

“আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি, তারপর তোমাদের আকৃতি দিয়েছি”। (সূরা আ’রাফ:১১)

তিনি এক, তার বৈচিত্র্যময় সৃষ্টিতে সর্বক্ষেত্রে “এক”-ই থাকতে চান। তিনি “মুতাকাব্বির” বা অহংকারী। অহংকার তাঁর গুণ, তা তো তাকেই মানায়। বান্দার এতে সামান্য প্রশ্ন তোলারও অবকাশ নেই।

এসব হাদীসের ভিত্তিতেই প্রখ্যাত হাদীসবেত্তা ইমাম নববী বলেন, এ ব্যাপারে হাদীস বিশারদগণ একমত যে রূহ বিশিষ্ট প্রাণীর প্রতিকৃতি বানানো নিষিদ্ধ এবং হারাম। (ফাতাওয়াল ইসলাম, প্রশ্ন নং:৭২২২ ও ২০৮৯৪, মাকতাবা শামেলা)

পাঠক আমাদের সংস্কৃতি হিসেবে কোন মূর্তি বা ভাস্কর্য ভাঙ্গার কথা হেফাজতে ইসলাম বলে নি বরং এ ভাবে যেন মূর্তি বা ভাস্কর্য বানানোর প্রতিযোগীতা না শুরু হয় সে জন্য ইসালামের নির্দেশনা সামনে রেখে দাবি টি করা হয়েছে তাহলে এটার মধ্যে ভুল খুজা অপ সংস্কৃতি দালালরাই করতে পারে ।ইরান ও লিবিয়ায় এবং শেখ সাদী ও শেখ ফরিদদুদ্দীন আত্তার (রহঃ)-এর মাজারের সামনে ভাস্কর্যের কথা উল্লেখ করেছেন। কোথায় কি ভাস্কর্য আছে তা ইসলামের দলিল নয়। দলিল হলো কোরআন ও হাদিস

দুই সন্তানকে পদ্মায় ফেলে দিলেন বাবা!

বাবা বললেন চুল কাটাতে নিয়ে যাবেন। তাঁর সঙ্গে সানন্দে চুল কাটাতে গেল দুই সন্তান মুন্নি (১০) ও মানসুর (৫)। কিন্তু বাবা ওদের চুল কাটাতে নিয়ে গেলেন না। নিয়ে গেলেন পদ্মা নদীর ওপর লালন শাহ সেতুতে। নিজ হাতে দুই সন্তানকে সেতু থেকে ফেলে দিলেন নদীতে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওই দুই শিশুকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। 
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বারদাগ গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মালেকের এই ঘটনা সম্পর্কে জানা যায় পারিবারিক সূত্রে। গতকাল শুক্রবার দুই সন্তানকে পদ্মা নদীতে ছেড়ে দেওয়ার কথা মালেক নিজেও স্বীকার করেছেন।
আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে মালেককে অসুস্থ অবস্থায় ভেড়ামারা বিদ্যুেকন্দ্রের পাশের এক জঙ্গল থেকে উদ্ধার করা হয়। তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পুলিশ পাহারায় চিকিত্সা দেওয়া হচ্ছে।
প্রথম আলো ডটকমকে মুন্নি ও মানসুরের মা মমতাজ খাতুনের দেওয়া ভাষ্যমতে, গতকাল সকাল নয়টার দিকে দুই ছেলেমেয়েকে চুল কাটানোর কথা বলে তাদের বাবা নিয়ে যায়। এরপর মালেক আর ফিরে আসেননি। সকালে তিনি শুনতে পান, ছেলেমেয়েকে তাঁর স্বামী নদীতে ফেলে দিয়েছেন।
হাসপাতালে চিকিত্সাধীন আবদুল মালেক সাংবাদিকদের বলেন, ‘অভাবের সংসার, পেটে ভাত নাই, সন্তান বাঁচি রাখি কী করব। তাই ব্রিজের ওপর নি ফেলি দিছি।’
মালেকের ভাষ্যমতে, গতকাল সকালে দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি একটি নসিমনে করে লালন শাহ সেতুর ওপর নামেন। মুন্নি ও মানসুরকে সেতুর রেলিংয়ের ওপর বসিয়ে প্রথমে মুন্নিকে ফেলে দেন। ভয়ে মানসুর দৌড় দিলে তাকে ধরে নদীতে ফেলে দেন। এরপর তিনি গ্রামে ফিরে আসেন।
ভেড়ামারা থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আবদুল মতিন প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, মালেককে পুলিশ পাহারায় চিকিত্সা দেওয়া হচ্ছে। দুই সন্তানকে পদ্মা নদীতে ফেলে দেওয়ার কথা সুস্থ অবস্থায় তিনি স্বীকার করেছেন। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।